শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

কঠিন সমীকরণে প্রার্থিতা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিউ হ্যাম্পশায়ারে জিতলেন ট্রাম্প ও স্যান্ডার্স, ধরাশায়ী হিলারি ও টেড

লাকমিনা জেসমিন সোমা

কঠিন সমীকরণে প্রার্থিতা

ক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় প্রাক-নির্বাচনে চমক দেখালেন রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান দলের প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জন কেইসিককে দুই গুণেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পর্যুদস্ত করেন ট্রাম্প। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক দলে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের কাছে হেরে  গেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি   হিলারি ক্লিনটন। নিউ হ্যাম্পশায়ারের এই প্রাইমারির ফলাফল       মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোনয়নে কঠিন সমীকরণের আভাস দিল। রিপাবলিকান দলের যে দুজনকে ‘আউটসাইডার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল, সেই ট্রাম্প ও সিনেটর টেড ক্রুজই এখন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে, ভারমন্ট  থেকে নির্বাচিত সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের কাছে ২০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে নির্দয়ভাবে হেরে যাবেন হিলারি ক্লিনটন, তাও খুব একটা প্রত্যাশা করেনি কেউ। যদিও হিলারির বিশ্বাস, নিউ হ্যাম্পশায়ারে সম্পূর্ণ পরাজিত হলেও ওবামার উত্তরসূরি হিসেবে সাউথ ক্যারোলিনা ও  নেভাদায় অনেক ভালো ফল পাবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় প্রাক-নির্বাচন বা প্রাইমারির ফলাফল অনেকটাই আঁচ করতে পারছিলেন সবাই। কিন্তু তাই বলে ট্রাম্প এত ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন তা কেউ কল্পনা করতেই পারেনি। দৌড়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা কাসিচকে দুই গুণেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পর্যুদস্ত করেন এই ‘দুর্মুখ’ খ্যাত প্রার্থী। অন্যদিকে নিউ হ্যাম্পশায়ার ও ভারমন্ট দুই প্রতিবেশী রাজ্য। সেই হিসেবে ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত সিনেটর স্যান্ডার্স তার প্রতিবেশী রাজ্যের ভোটারদের কাছ থেকে  ভোট পাবেন এ কথা সবাই জানত। কিন্তু তিনি যে ২০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট  লেডি হিলারি ক্লিনটনকে নির্দয়ভাবে পরাজিত করবেন, তা ভাবেনি কেউ। ৩০ বছর বয়সের কম বয়সী ভোটার ও নারীদের সিংহভাগ সমর্থন জিতে নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর সেই সঙ্গে ‘হিলারিয়াস’ ভোটের ব্যবধান একবারেই পর্যুদস্ত করে দিয়েছে  ডেমোক্র্যাট দলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিলারিকে।  ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরেই কোনো রাখঢাক না  রেখে বার্নি বলেছেন, ‘মানুষ সত্যিকারের পরিবর্তন চাইছে’। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, কেউ কারও চেয়ে কম না। এখানে এগিয়ে থাকছেন কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী তো ওখানে হৈহৈ করে এগিয়ে যাচ্ছেন  কোনো ডেমোক্র্যাট। সব মিলিয়ে ২০১৬ এর মার্কিন  প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘সেমিফাইনালে’ এখন প্রাইমারি দখলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে দৌড়ে এগিয়ে থাকা এক নম্বর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আর এক নম্বর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের মধ্যে।  যে দলের অন্যতম প্রার্থী হিসেবে প্রাইমারি-প্রাইমারিতে এখন লড়ছেন বার্নি, সেই শাসকদল ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীর শাসন যে মার্কিন মুল্লুকের আম আদমি মন থেকে আর  মেনে নিতে পারছেন না, তা ভোটের সময় জানিয়ে দিতে পিছপা হননি বার্নি। নিউ হ্যাম্পশায়ারে সম্পূর্ণ পরাজিত হলেও প্রাইমারির পরবর্তী পর্যায়ে হিলারি অনেক ভালো ফল পাওয়ার আশা করছেন। সাউথ ক্যারোলিনা ও নেভাদায় পরবর্তী ভোট হবে। সেখানকার মোট ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আফ্রিকান-আমেরিকান ও মেক্সিকান। তারা গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাধিক্যে ওবামাকে সমর্থন করেছিলেন। হিলারি নিজেকে ওবামার উত্তরসূরি হিসেবে স্থাপন করেছেন। সেই সুবাদে তার বিশ্বাস, সেখানে তিনি  ভোটারদের পাশে পাবেন। তা ছাড়া স্যান্ডার্স এখন পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গ ও অভিবাসীদের মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। সে কারণে হিলারির সমর্থকদের বিশ্বাস, নির্বাচনের পরবর্তী দৌড়ে তিনি স্যান্ডার্সকে ছাড়িয়ে যাবেন।

এদিকে অনেকেই ভেবেছিলেন, নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রাইমারি ভোটের পর রিপাবলিকান দলে প্রার্থী তালিকা  মোটামুটি স্থিতিশীল হয়ে আসবে। বাস্তবে তা ঘটেনি; বরং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে এসেছে। ১৭ জন প্রার্থী নিয়ে রিপাবলিকানদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তা এখন সাতজনে এসে ঠেকেছে।

এই সাতজনকে দুটি স্পষ্ট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। একদিকে রয়েছেন ‘আউটসাইডার’ হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প ও সিনেটর টেড ক্রুজ। অধিকাংশ রাজনৈতিক প্রশ্নে ‘চরমপন্থি’ অবস্থানের কারণে উভয়ই রিপাবলিকান রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিরাগভাজন হয়েছেন। অন্যদিকে রয়েছেন তথাকথিত ‘এস্ট্যাবলিশমেন্টপন্থি’। অপেক্ষাকৃত নমনীয় অবস্থানের কারণে এই ঘরানার প্রার্থীরা দলীয় নেতৃত্বের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। এই দলে আছেন ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিও এবং ‘তিন গভর্নর’ নামে পরিচিত জন কেইসিক,  জেব বুশ ও ক্রিস ক্রিস্টি। এর আগে গত সপ্তাহে আইওয়া প্রাইমারিতে ভোটের ফলাফলটা কিন্তু উল্টো হয়েছিল।  সেখানে জিতেছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন আর রিপাবলিকান প্রার্থী টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি প্রাইমারি নির্বাচন হবে সাউথ ক্যারোলিনা আর নেভাদায়।

‘সিএনএন’ এর অনলাইনে প্রকাশিত সর্বশেষ ফলাফল (স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিট) অনুযায়ী, ভোট গণনা হয়েছে ৭৫ ভাগ। এতে ডেমোক্র্যাটিক দলের স্যান্ডার্স- ৬০ শতাংশ, হিলারি ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের ট্রাম্প ৩৪ শতাংশ,  কেইসিক ১৬ শতাংশ; ক্রুজ, রুবিও, বুশ- ১১ শতাংশ, ক্রিস্টি ৮ শতাংশ, ফিওরিনা- ৪ শতাংশ এবং কারসন- ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

সর্বশেষ খবর