বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঘুষ না দিলেই কাটা হয় বৈধ গ্যাস সংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘুষ না দিলেই কাটা হয় বৈধ গ্যাস সংযোগ

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহের তিতাস অঞ্চলে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। বেশ কয়েক দিন এ সংকটাবস্থা ছিল মারাত্মক। বর্তমানে সেই সমস্যা কিছুটা কমলেও তা পুরোপুরি যায়নি। নিত্যদিনের খাবার তৈরি করতে এখনো গৃহিণীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ ছাড়া শিল্প কারখানায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছুদিন আগে গ্যাসের এ সমস্যা দেখা দেয়। তবে সে সময় গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে বলেও জনগণকে সচেতন করা হয়। তিতাস গ্যাস কোম্পানির আওতাধীন অঞ্চলে গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন ১ হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর পেট্রোবাংলা বর্তমানে দৈনিক এ অঞ্চলে ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। অর্থাত্ গ্যাসের ঘাটতি হচ্ছে মাত্র ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর এই সামান্য ঘাটতির কারণে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহে এত ঘাটতি হচ্ছে বলে মনে করেন না সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মাত্র ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতির কারণে এত বড় সংকট হতে পারে না। এ সংকটের মূল কারণ শিল্প কারখানায় দেওয়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ। আর এ অবৈধ সংযোগ দেওয়ার পেছনে আছে খোদ তিতাসের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে এ সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটকে মালিকরা ঘুষ দিতে সম্মত না হলে তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। কাটা হয় কারখানার গ্যাস সংযোগ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছে। সরকারও সম্প্রতি শিল্প কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। প্রকৃত তথ্য জানতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে মিলেছে ভয়াবহ তথ্য। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শত শত শিল্প কারখানা কোনো অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করছে। তদন্ত কমিটির সদস্য তিতাস বোর্ডের মেম্বার খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাক বলেন, ‘তদন্তকাজ শেষ পর‌্যায়ে। প্রতিবেদনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত দেওয়া হবে।’ তদন্তে কারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই তা বলতে চাচ্ছি না। তবে দোষীদের যাতে শাস্তি হয়, এমন সুপারিশই আমরা করব।’ গ্যাসের ঘাটতির কারণে শিল্প কারখানাসহ বাসাবাড়িতে সরকার ২০১০ সালে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করে দিলেও শিল্পে সংযোগ পাওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির অনুমতি ছাড়া শিল্পে কোনো সংযোগ দেওয়া যাবে না বলে সরকার একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে। এ কমিটির প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। এ ছাড়া কমিটিতে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানিসচিব, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, তিতাসের এমডিসহ গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর এমডিরা রয়েছেন।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সিন্ডিকেট : অবৈধ গ্যাস সংযোগ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিতাসের পরিচালনা পর্ষদ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটি অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সংযোগের নেপথ্যে ছয়জনের একটি সিন্ডিকেট খুঁজে পেয়েছে। তারা হলেন তিতাস গ্যাস কোম্পানির ভালুকা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান ঝন্টু, গাজীপুরের ব্যবস্থাপক আ ম সাইফুল ইসলাম, ফতুল্লার ব্যবস্থাপক শহিরুল, চন্দ্রার উপব্যবস্থাপক তোরাব আলী, সিবিএ নেতা ফারুক হাসান ও তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী নওশাদুল ইসলাম। আর এই এমডি হলেন সিন্ডিকেটের প্রধান। সিন্ডিকেট সদস্যদের পরিচয় ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মশিউর রহমান ঝন্টু মিটার টেম্পারিংয়ের গুরু। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির নেতার ভাই এবং জামায়াতপন্থি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। ইতিমধ্যে তিনি অবৈধভাবে শত কোটি টাকা আয় করেছেন। এ ছাড়া আ ম সাইফুল ইসলাম গাজীপুর বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জড়িত, শহিরুল ফতুল্লা বিএনপির সঙ্গে জড়িত আর তোরাব আলী গাজীপুর বিএনপির নেতা। সাবেক সিবিএ নেতা ফারুক হাসান বর্তমানে অবসরে থাকলেও তিনিও মিটার টেম্পারিংয়ের গুরু। আর এমডি নওশাদুল ইসলাম সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বিএনপি-জামায়াত আমলের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মো. মোশারফ হোসেনের এলাকা ময়মনসিংহের লোক হওয়ায় জয়দেবপুর ও নারায়ণগঞ্জে পোস্টিং নিয়েছিলেন। তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে নওশাদুল ইসলামকে মোশারফ হোসেনের ‘পালক পুত্র’ও বলা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাভারের আশুলিয়ায় দ্যাটস ইট নিট লিমিটেডে একটি গ্যাস সংযোগ রয়েছে, যার ঘণ্টাপ্রতি লোড ৩০ হাজার ঘনফুট অননুমোদিত। এ কোম্পানির টঙ্গীর নিশাতনগরে ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড নামের গার্মেন্ট রয়েছে, যেখানে গ্যাস সংযোগের অনুমতি নেই। কিন্তু সেখানেও গ্যাস সংযোগ কমিটির অনুমতি না নিয়েই সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুরে ভিয়েলা স্পিনিং লিমিটেডে একটি বৈধ সংযোগ রয়েছে, যার ঘণ্টাপ্রতি লোড ১৪ হাজার ৪৭০ ঘনফুট। এ কারখানায় সম্প্রতি গ্যাস সংযোগ কমিটি লোড বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৫ হাজার ৬০০ ঘনফুট করে। এই গ্রাহকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে গাজীপুর জোনে ভিয়েলা স্পিনিং লিমিটেড ইউনিট-২ নামে। এটিতে গ্যাস সংযোগের অনুমতি না থাকলেও তিতাস এখানেও সংযোগ দিয়েছে।

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে তালহা ফেব্রিকসকে অনুমোদনহীন ১৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের বিশাল পাইপলাইন স্থাপন করে দিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। ফলে এ প্রতিষ্ঠান হিসাবের বাইরে লাখ লাখ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করছে। এ ছাড়া গাজীপুরের ডালাস ফ্যাশন, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, আকবর কটন, ডংব্যাং ডায়িংকে অননুমাদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহারের অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছে তিতাসের এ সিন্ডিকেট। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজীপুরে ফার সিরামিকস, নরসিংদীর পাঠান সিএনজি, নারায়ণগঞ্জের সরকার হোসিয়ারি, ভালুকার এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইলসহ অন্তত অর্ধশত প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে। এ কাজে এসব প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে কোটি টাকা ঘুষ দিচ্ছে তিতাসের ওই সিন্ডিকেটকে। তিতাস বোর্ড গঠিত অবৈধ গ্যাস সংযোগ তদন্ত কমিটির কাছে আঞ্চলিক ডিভিশন গাজীপুরের ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন অনুমোদনের বাইরে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সিন্ডিকেট-প্রধান স্বয়ং এমডি : তিতাসের অবৈধ সিন্ডিকেটের প্রধান এ প্রতিষ্ঠানেরই এমডি নওশাদুল ইসলাম। প্রতিবেদনে এমনটিই উল্লেখ করা হয়েছে। এমডির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছে তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয় নারায়ণগঞ্জ জজ আদালতে। ওই মামলায় তার ছয় মাসের কারাদণ্ডও হয়। পরে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ এ মামলার কার্যক্রম ছয় সপ্তাহ স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। ২০১০ সালের ৭ জুন রুলটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আগের স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। মামলা হওয়ার সময় নওশাদুল ইসলামের পদ ছিল ডেপুটি ম্যানেজার। তবে মামলার সব তথ্য গোপন রেখে তিনি একের পর এক পদোন্নতি পান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেও সরকারি কোনো কোম্পানিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কেউ চাকরিতে বহাল থাকতে পারবেন না। পুনরায় নির্দোষ প্রমাণিত হলেই কেবল চাকরি ফিরে পেতে পারেন। ফলে বর্তমানে নওশাদুল ইসলামের এমডি পদে থাকার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, নওশাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এর আগেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহসানুল জব্বারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তবে ওই কমিটিকে তিতাসের এমডি কোনো সহায়তা না করায় এর কার্যক্রম আর এগোয়নি। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নওশাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। তিতাসের এমডির দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আবেদনও করা হয়েছে।

বৈধ গ্যাসে অবৈধ হস্তক্ষেপ : জানা যায়, তিতাসের এ সিন্ডিকেটকে যেসব শিল্পমালিক ঘুষ দেন না তাদের মিটার নষ্ট— এ অজুহাতে সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। আর চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ দিলে গ্যাসের বিলও তারা কমিয়ে দেয়। একাধিক শিল্পমালিক এ অভিযোগ করেছেন। তিতাসের সিন্ডিকেটটি এতই বেপরোয়া যে, ঝামেলা এড়াতে ঘুষের টাকা তারা নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই নিয়ে থাকেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, কালিয়াকৈরের ভান্নারায় ঊর্মি নিটওয়্যারে একটি বৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময় তিতাসের ভালুকা জোনের ব্যবস্থাপক মশিউর, ফতুল্লা জোনের ব্যবস্থাপক শহিরুল ও চন্দ্রার ডেপুটি ম্যানেজার তোরাব আলীকে নিয়মিত ঘুষ দিয়ে সংযোগ অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ঘুষের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তা না দেওয়ায় গত বছরের ২০ মে মিটার নষ্ট— এ অজুহাতে লাইনটি কেটে দেয় তিতাস। হাইকোর্ট থেকে আদেশ নিয়ে ৩৫ দিন পর সংযোগটি আবার ফিরে পায় ঊর্মি নিটওয়্যার। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হয় ওই সিন্ডিকেট। ভালুকা জোনের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান ঊর্মি নিটওয়্যারের এমডিকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের ৩০ লাখ টাকা দিতে হবে। তা না হলে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেব। আদালতের আদেশ নিয়ে এলেও কাজ হবে না। আমরা এমডির লোক।’ জানা যায়, মশিউর রহমানকে ঊর্মি নিটওয়্যার কর্তৃপক্ষ গত বছরের ১২ জুলাই ও ২৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। সংযোগ বহাল রাখতে জাকিরের নামে ১২ ও ১৩ লাখ টাকার দুটি চেক তিতাসের ফতুল্লা জোনের ম্যানেজার শহিরুলের কাছে জমা দেন ঊর্মি নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইলিয়াস হোসেন। এ ছাড়া সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য চন্দ্রার ব্যবস্থাপক তোরাব আলীকে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ কিস্তিতে দিয়েছেন ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। এসব টাকাও তোরাব আলী নিয়েছেন ব্যাংকের মাধ্যমে।

জানা যায়, তোরাব আলী ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৪৪১০১১৯০৭৩ থেকে নিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া ৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকার চারটি লেনদেন করেছেন যথাক্রমে ১২ নভেম্বর ২০১৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ও ১১ মার্চ ২০১৫ সালে যমুনা ব্যাংকের ০০৭৮০৩১০০১৮৯৮৫ নম্বরের অ্যাকাউন্টে।

ঊর্মি নিটওয়্যারের মালিক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে বহু জায়গায় লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু কিছুই হয় না এদের। বাধ্য হয়ে মামলা করেছি কোর্টে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তোরাব আলী বলেন, ‘গ্রাহক অভিযোগ করতেই পারেন। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি সত্য কিনা।’ অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদে তৌফিক সিএনজির কাছ থেকে দাবি করা টাকা না পেয়ে বৈধ সংযোগটি মিটার নষ্ট— এ অজুহাতে কেটে দেওয়া হয়। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে আদেশ নিয়ে সংযোগ বহাল করান। এ বিষয়ে তৌফিক সিএনজির মালিক মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘গত বছরের ১৫ মে আমার মিটার টেস্ট করে তিতাস কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি ভালো। আমার সিএনজি স্টেশনে প্রতি মাসে গড়ে ৫৫ লাখ টাকার সিএনজি বিল আসে। তিতাসের ভালুকার ম্যানেজার মশিউর, গাজীপুরের ম্যানেজার সাইফুল, সাবেক সিবিএ নেতা ফারুক হাসান জোয়ারদার আমাকে প্রস্তাব দেন, প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা বিল করে দেবেন তারা। এ জন্য প্রথমে দিতে হবে ২০ লাখ টাকা। এরপর প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা করে দিতে হবে। আমি এতে সম্মত না হলে তারা গত বছরের ২৮ অক্টোবর আমার স্টেশনে এসে মিটার পরীক্ষা করে নষ্ট অজুহাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেন। তারা তিতাসের এমডির লোক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করেও কিছু হয় না। এ ব্যাপারে আমি বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে লিখিত নালিশ করেছি।’ জানতে চাইলে তিতাসের এমডি প্রকৌশলী নওশাদুল ইসলাম বলেন, ‘যারা টাকা চায় তাদের সোজা ধরে নিয়ে পুলিশে দেওয়ার অনুরোধ করছি।’ তার নিজের বিরুদ্ধেও অর্থ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে— এমনটি জানালে এর জবাবে নওশাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নাম দিয়ে যদি কেউ টাকা নেয় তাহলে আমি কীভাবে তা বন্ধ করব?’ তিনি এ রকম কিছুর সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেন। তিতাসের গাজীপুরের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ ধরনের অভিযোগ এই প্রথম শুনলাম। যেহেতু তিতাস এখন অনেক বেশি স্বচ্ছ আর কঠোর, বিশেষ করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও লোডের ব্যাপারে আমরা এখন অনেক বেশি কঠোর, এ কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা এসব অভিযোগ করতে পারে।’ আরেক অভিযুক্ত ভালুকা জোনের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমি অনেক অবৈধ সংযোগ কেটে দিয়েছি। যাদের স্বার্থ নষ্ট হয়েছে তারা এসব অভিযোগ করছেন। আমাদের তারা এমডির লোক বলে সংকট তৈরি করছে। তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’ এটি তো তিতাস কর্তৃপক্ষেরই তদন্ত, নতুন করে কী আবার তদন্ত হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি কিছু জানি না এ ব্যাপারে কী হওয়া উচিত।’

সর্বশেষ খবর