শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলো না বরিশাল আওয়ামী লীগের

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্ ও রাহাত খান, বরিশাল থেকে

তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলো না বরিশাল আওয়ামী লীগের

২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর পৃথক সম্মেলনের মাধ্যমে জেলায় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে সভাপতি ও তালুকদার মো. ইউনুসকে সাধারণ সম্পাদক এবং শওকত হোসেন হিরণকে সভাপতি ও আফজালুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত কমিটি গঠিত হয়। এ দুই কমিটির পূর্ণাঙ্গ কলেবর খসড়া আকারে কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছিল সম্মেলনের পর পরই। কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় ৪ নেতা চালাচ্ছিলেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। কিন্তু সম্মেলনের প্রায় দুই বছর পর ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল মহানগর সভাপতি হিরণের মৃত্যুর পর স্থবিরতা নেমে আসে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলেন মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা। বিধ্বস্ত সেই অবস্থা থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আগলে রেখেছেন ওই কমিটির একমাত্র নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আফজালুল করিম। হিরণের মৃত্যুর পর তার আমলে সুবিধাভোগী অনেক নেতা যুক্ত হন দলীয় প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসানাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছায়াতলে। মহানগরে কোনো পদ-পদবি না থাকলেও বেশ কয়েটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে ফেলেছেন সাদিক আবদুল্লাহ। তবে কেন্দ্রে জমা দেওয়া মহানগরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোথাও নাম নেই তার। তারপরও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাবেন আশা সাদিক আবদুল্লাহর। হিরণের মৃত্যুর পর সভাপতি হিরণের স্থলে তার সহধর্মিণী জেবুন্নেছা আফরোজ এমপির নামভুক্ত করে নতুন পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এ কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে না। উঠতি নেতারা পদ-পদবি না পেয়ে ভুগছেন মনকষ্টে। এদিকে আগামী মার্চে সম্মেলনের আয়োজন করছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ওই সম্মেলনের আগে কেন্দ্রে জমা দেওয়া মহানগরীর প্রস্তাবিত কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে, না নতুন সম্মেলন করে আবার কমিটি হবে, নাকি আহ্বায়ক কমিটি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন মহানগরের পদপ্রত্যাশী নেতারা। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুল করিম বলেছেন, অবশ্য আহ্বায়ক কমিটি করার সুযোগ নেই। তিনি আশা করছেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই জেবুন্নেছা আফরোজকে সভাপতি এবং তাকে (আফজাল) সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পাবে। তবে মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগে সম্মেলন করার মতো অবস্থা নেই। সিনিয়র নেতারা বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মহানগরে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেন, অথবা একটি আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করে দিতে পারেন। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের নেতারা তাকে (সাদিক) মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পেতে দলের সভানেত্রীর কাছে প্রস্তাব আকারে একাধিকবার আবেদন করেছেন বলে তিনি জানান। এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতির স্থলে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সদর আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমকে অন্তর্ভুক্ত করে কেন্দ্রে জমা দেওয়া ওই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক শীর্ষ নেতা। সে ক্ষেত্রে কপাল পুড়তে পারে সভাপতি পদের অপর দাবিদার জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক দাবিদার সাদিক আবদুল্লাহর। আবার কেউ বলছেন, জেবুন্নেছা আফরোজকে সভাপতি এবং মহানগর যুবলীগের বঞ্চিত যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হতে পারে মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। সাদিক অনুসারীদের দাবি, প্রয়াত মেয়র হিরণের অনুপস্থিতিতে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান করে ফেলেছেন সাদিক। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদের আরও কয়েকজন জোর দাবিদার রয়েছেন। তাই সুস্থিতি বজায় রাখতে জাহিদ ফারুক শামীমকে আহ্বায়ক এবং জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি, আফজালুল করিম, মাহমুদুল হক খান মামুন, মাহবুবউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সাদিক আবদুল্লাহকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্রীয় কমিটি। অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগ অগোছাল থাকলেও জেলায় সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এমপির নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। তাদের গতিময় নেতৃত্বের কারণে জেলার ১০ উপজেলার সবকটিতে চেয়ারম্যান এবং ৬ পৌরসভার সবগুলোতেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দলের প্রার্থীরা।

জেলা সভাপতির ব্যক্তিমাধুর্যের ফলেই এই সাফল্য এসেছে বলে মনে করেন দলের নেতা-কর্মীরা। তবে ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে গঠিত জেলা আওয়ামী লীগ এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপ নেয়নি। এতে জেলা কমিটিতে পদপ্রত্যাশী অনেক উঠতি নেতা হয়ে পড়েছেন নিরাশ, অনেকে হয়েছেন নিষ্ক্রিয়। তাদের আশা, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে এবং পরীক্ষিত নেতারা ওই কমিটির বিভিন্ন পদে স্থান পাবেন। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া আছে। দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই এই প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন পাবে এবং এতে যোগ্য নেতারা স্থান পাবে বলে তার ধারণা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মার্চে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই বরিশাল মহানগরসহ সব ইউনিটে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। মহানগর আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য কে বা কারা নেতৃত্বে আসছেন জানতে চাইলে নাসিম বলেন, যারা যোগ্য, যারা কমিটেড, দুঃসময়ে যারা দলের হাল ধরতে পারবেন, যাদের গণভিত্তি আছে, যাদের মধ্যে নীতি এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রয়েছে তাদের হাতেই বরিশাল মহানগর আওয়াম লীগের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি মার্চে জাতীয় সম্মেলনের আগে সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর