বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

লাখ টাকার মাছ

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

লাখ টাকার মাছ

বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহে গতকাল মেলা শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হরেক প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। মেলায় একটি বাঘাইড় মাছের ওজন ছিল ৬২ কেজি। মাছটি বিক্রি হয়েছে ১৮০০ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি মিষ্টির ওজন ছিল ৫ কেজি। মেলার প্রথম দিন ছিল জামাই বরণ আর আজ বউমেলার মধ্য দিয়ে শেষ হবে মেলা।

এবারের সবচেয়ে বড় বাঘাইড় মাছটি নিয়ে এসেছেন গাবতলী উপজেলার রানীরপাড়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল করিম। মেলার শুরুতে মাছটির দাম হাঁকা হয় ২ হাজার টাকা কেজি। পরে দুপুরে ১৮০০ টাকা কেজি দরে মাছটি কেটে বিক্রি করা হয়। মাছ বিক্রেতা আবদুল করিম জানান, যমুনা নদী থেকে মাছটি সিরাজগঞ্জের মত্স্যজীবীরা ধরেন। তাদের কাছ থেকে মাছটি কিনেছেন। মেলায় বোয়াল ১০ কেজি, কাতল ২০ কেজি, রুই ১২ কেজি, পাঙ্গাশ ২০ কেজি, বিগ্রেড ১০ কেজি ওজনের মাছ উঠেছে। গাবতলী উপজেলার রানীরপাড়া গ্রামের মাছ বিক্রেতা তছলিম জানান, এবারের মেলায় তিনি ১০ কেজি ওজনের বিগ্রেড মাছ নিয়ে এসেছেন। মাছটির কেজি হাঁকা হয়েছে ২৮০ টাকা। ক্রেতারা দাম করেছেন ২৫০ টাকা করে। মেলায় বিক্রেতাদের মধ্যে বড় মাছ বিক্রির প্রতিযোগিতা লেগে যায়। যে যত বড় মাছ তুলতে পারবে তত তার নাম ডাক। মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে মিষ্টি বিক্রেতারাও। গত কয়েক বছরে তাদের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। জানা যায়, মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতি নদীর শাখা (খাল) সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে বসে এই মেলা। প্রায় ১৫০ বছর আগে বগুড়া-চন্দনবাইশা সড়কসংলগ্ন পোড়াদহ খালের পাড়ে এক বিশাল বট গাছের তলে আয়োজন করা হতো সন্ন্যাসী পূজার। প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার আয়োজিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়াবাসীর মিলনমেলা। মেলাকে ঘিরে আশপাশে প্রায় ২০ গ্রামের মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়। আসেন স্বজনরাও। এ বছরও একটি ৫ কেজি ওজনের মিষ্টির নাম দেওয়া হয়েছে হাসি-খুশি। এ ছাড়া এক কেজি, দুই কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে। মেলা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী অন্তত ২০ গ্রাম আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। ফার্নিচার, বরই, পান-সুপারি, তৈজস পত্র, খেলনাও  মেলায় পাওয়া যায়। বিশেষ করে মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে চলে আনন্দ উত্সব।  কোন জামাই কত বড় মাছ কিনেছে তা নিয়েও চলে প্রতিযোগিতা। জামাইরা একে অন্যের বাড়ি বেড়াতে যান মিষ্টি হাতে। আবার জামাইদের হাতে বাড়ির বড়রা নগদ অর্থ তুলে দিয়ে থাকেন। এবার মেলার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিদ মাহমুদ খান জানান, মেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর‌্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর