সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদের ভোট শুরু হচ্ছে ২২ মার্চ। মোট ছয় ধাপে চার হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গতকাল এ ছয়টি ধাপের ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করে স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম ধাপের বিস্তারিত তফসিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ ২২ মার্চ। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি। আপিল দাখিল ২৫ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় রাখা হয়েছে ২ মার্চ। প্রতীক বরাদ্দ হবে ৩ মার্চ। ইসির বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের জানান, প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির ভোট হবে ২২ মার্চ। দ্বিতীয় ধাপে ৭১০টি ইউপিতে ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ৭১১টি ইউপিতে ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭২৮টি ইউপিতে ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ৭১৪টি ইউপিতে ২৮ মে এবং ষষ্ঠ ধাপে ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হবে ৪ জুন।

এদিকে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে সারা দেশে ছয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তফসিল দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এবারই প্রথম স্থানীয় পর্যায়ের সবচেয়ে বড় নির্বাচনে অনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। রীতি অনুযায়ী স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গণমাধ্যমকে জানানোর রেওয়াজ থাকলেও এর তোয়াক্কা করেনি কমিশন।

নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, সংশোধিত নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধি বুধবার গেজেট আকারে জারি করা হয়েছে। এবার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা ও টিআইএন নম্বর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। বিধি অনুযায়ী প্রার্থীদের নির্ধারিত জামানত দিতে হবে। আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। দশম সংসদ, উপজেলা, সিটি ও পৌর নির্বাচনের পর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসি এবার ইউপি নির্বাচন করছে। স্থানীয় সরকারে দলীয়ভাবে পৌর নির্বাচন করার পর দলীয়ভাবে ইউপি ভোট হচ্ছে। মোট ২০টি দল এবার পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এর আগে দেশে সব মিলিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে আটবার। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল প্রথম দফায় প্রায় ছয়শ’ ইউপিতে ভোট হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই তিন হাজার আটশ’র বেশি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইউপি ভোটের তারিখ দিতে পারলেন না সিইসি : দেশের নবম ইউনিয়ন পরিষদের দলভিত্তিক নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ তা ঘোষণা করতে পারেননি। ব্যাপক সমন্বয়হীনতার মধ্যে দেশের চার হাজার ২৭৫টি ইউপির ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম গতকাল আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাতীয় সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন গাজীপুরের সফিপুরে। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে ইসি ভোটের জন্য ছয়টি দিন চূড়ান্ত করেন। দুপুর গড়িয়ে গেলেও ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা নিশ্চিত করতে পারেনি, তফসিল দেওয়া হচ্ছে কি না। ইউপি নির্বাচনের তফসিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করবেন এমনটাই রীতি ইসিতে। তফসিল ঘোষণার আগে গণমাধ্যমকে জানানোরও রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু বেলা ১টার পরও কোনো ধরনের নিশ্চয়তা না পেয়ে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীরা একজন নির্বাচন কমিশনারের কাছে যান। বেলা ২টার পর নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ইউপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। ইসির একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সিইসি তফসিল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তা করতে পারলেন না তিনি।

প্রার্থীর চূড়ান্তে দলকে ইসির চিঠি : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দল চেয়ারম্যান পদে একজনকে মনোনয়ন দিতে পারবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তফসিল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি, নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জমা দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে ইসি।

ইসির হুঁশিয়ারি : আসন্ন ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ ইসি সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে কিছু গাফিলতির ঘটনা ঘটেছিল। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।