আমদানি করা নিম্নমানের গমের পর এবার নিম্নমানের চাল ঢুকছে লালমনিরহাটের সরকারি খাদ্য গুদামে। অভিযোগ উঠেছে, জেলার সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কার কাছ থেকে কী পরিমাণ চাল কিনতে পারবেন। এ জন্য সুপারিশকারী নেতারা নির্ধারিত টোকেন ব্যবহার করছেন।
ওই টোকেন নিয়ে গেলে তার কাছ থেকে ধান-চাল কিনতে বাধ্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। যারা এর প্রতিবাদ করছেন, তাদের ওপরই আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে গতকাল হাতিবান্ধা খাদ্য গোডাউনে নিম্নমানের চাল সরবরাহের সময় তোপের মুখে পড়েন খাদ্য কর্মকর্তা। স্থানীয় লোকজন জানান, ওই কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকেই লুটপাটে মেতে উঠেছেন। ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইলে তিনি সই করেন না। নিম্নমানের চালের ছবি তুলতে গেলে খাদ্য বিভাগের কর্মচারীদের বাধা দেওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে পারেননি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ওই গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দ্র কান্ত কথা বলতে রাজি হননি। খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, টোকেন নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সরবরাহ করা অধিকাংশ চালই নিম্নমানের এবং আবর্জনাযুক্ত। বেশির ভাগই খাওয়ার অযোগ্য। এসব চাল কিনতে আপত্তি করায় সম্প্রতি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা হয়রানির শিকার হয়েছেন। সূত্র জানায়, চলমান বাজারদরের চেয়ে কৃষকের কাছ থেকে একটু বেশি দরে চাল কেনে খাদ্যগুদামগুলো। কৃষককে বিশেষ সুবিধা দিতেই বেশি দরে চাল ক্রয় করে সরকার। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কৃষক এ সুবিধা তেমন একটা পান না। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা বাজার থেকে কম দামে চাল কিনে তা বেশি দামে গুদামে বিক্রি করেন। সরকারি সিদ্ধান্তে গত বছর ১ মে কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল-গম সংগ্রহ শুরু হয়, চলবে আগামী মার্চ পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে লালমনিরহাটে চাল কেনার টার্গেট ৩ হাজার ৩০০ টন। গতকাল পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৫ মে. টন। খাদ্য গুদামে কার কাছ থেকে ধান-চাল কেনা হবে, তা ঠিক করে দেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় এমপির লোকেরা। তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্ধারিত টোকেন দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে পাঠান। তবে ওই টোকেনধারীরা কেউই মাঠ পর্যায়ের কৃষক নন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাদের সরবরাহ করা চাল নিম্নমানের, খাবার অনুপযোগী। তবে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের লাগামহীন দুর্নীতির কারণেই সাধারণ কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অসহায় কৃষকরা যাতে বঞ্চিত না হয় সে চেষ্টাই করছে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম মওলা বলেন, যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, ওই দলের নেতা-কর্মীরাই নিয়ন্ত্রণ করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার খাদ্যগুদাম। তাদের নির্ধারিত টোকেনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যক্তির কাছ থেকে চাল-ধান-গম ক্রয় করতে হয়। গত সোমবার (৮ জানুয়ারি) জেলার সদর ও আদিতমারী খাদ্যগুদামে মোটা অঙ্কের উেকাচ নিয়ে নিম্নমানের চাল গোডাউনে ঢোকাতে চাইলে বাধা দেয় স্থানীয়রা। তবে সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল হক নিম্নমানের চাল ঢোকানোর কথা অস্বীকার করেন।