শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে জনস্রোত

মোস্তফা মতিহার

ছুটির দিনে জনস্রোত

টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন। সুশৃঙ্খল সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে জনতা। গন্তব্যস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য গভীর ধৈর্যের সঙ্গে নিরন্তর প্রচেষ্টা। এক সারিতে পুরুষ, আরেক সারিতে নারী। এক পা এক পা করে ধীরলয়ে হাঁটছে মানুষ। যত সময় যাচ্ছে প্রতীক্ষার প্রহর ততই শেষ হচ্ছে। এমনই ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় ছুটির দিন ও গতকাল   মেলার ১২তম দিনের চিত্র। জনস্রোতের উপচেপড়া ভিড়ে একুশের আগেই চেতনায় শাণিত হয়েছে গ্রন্থমেলা। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বইপ্রেমীদের। প্রিয় লেখকের বই কিনেই পরিশ্রমটা পুষিয়ে নিয়েছেন বইপ্রেমীরা। হাতে হাতে বইয়ের শোভায় নিজেদের শোভিত করে অমর একুশের চেতনাকে ঋদ্ধ করে মেলাকে সফলতার পথে ধাবিত করেছে বইপ্রেমীরা। গতকাল ১২তম দিনে মেলায় এসেছেন যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডের বাসিন্দা ফ্যাশন ডিজাইনার ও মঞ্চ উপস্থাপিকা সানজিদা জাহান রোজী। তিনি বলেন, প্রাণের টানেই বইমেলায় আসি। তবে হুমায়ূন আহমেদের কারণেই বইমেলার প্রতি আমার আকর্ষণ জমে। প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতা আমাকে বিষণ্ন করে তোলে। অন্যদিকে বিকালে মেলায় প্রথমবারের মতো আসেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাম্রলিপি প্রকাশনীর সামনেই একটি উঁচু জায়গায় চেয়ার পেতে বসতে দেওয়া হয় তাকে। পাশেই ছিলেন তার স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমিন হক। এ সময় অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত সময় কাটান জাফর ইকবাল। অন্যদিকে সন্ধ্যায় মেলায় এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি সময় প্রকাশনে কিছুক্ষণ সময় কাটান। এরপর তিনি মেলা পরিদর্শন করেন। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

মোড়ক উন্মোচন করলেন বার্নিকাট : গতকাল মেলার তৃতীয় শিশুপ্রহরে সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সিসিমপুরের ‘আমার দেশ আমার গর্ব’ বই ও ডিভিডির মোড়ক উন্মোচন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট, ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জেরুজালেস্কি, বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বই মানুষকে নিজ দেশের মানুষ ও সমাজের নানাবিধ বিষয় শেখানোর পাশাপাশি ভিন দেশের মানুষ ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। নতুন ধ্যান-ধারণাকে পাথেয় করে বড় হতে সহায়তা করে।’

নতুন বই : গতকাল ১২তম দিন পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৯৩টি। আর গতকাল মেলায় এসেছে ২৮০টি নতুন বই।  উল্লেখযোগ্য নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত বিচারপতি গোলাম রাব্বানীর ‘বাংলাদেশের সংবিধানের বিকাশ, বৈশিষ্ট্য ও বিচ্যুতি’, অনন্যা থেকে প্রকাশিত ইমদাদুল হক মিলনের ‘রেশমি’ ও মুনতাসির মামুনের ‘ইতিহাসের খেরোখাতা সমগ্র ২’, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এনেছে আহমদ মুনসুরের ‘বহুবিবাহ ইসলাম ও মোহাম্মদ (স.)’, আগামী এনেছে রফিকুল ইসলামের ‘বাংলা দেশের সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ’ প্রভৃতি।

 কথা প্রকাশ এনেছে সেলিনা হোসেনের ‘নিঃসঙ্গতার মুখর সময়,’ চন্দ্রদ্বীপ এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ইদুর এবং দুষ্ট হাতি,’ বলাকা প্রকাশন এনেছে শামসুল আরেফীনের ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার দুর্লভ দলিল’, কথা প্রকাশ এনেছে পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপক ইমানুল হকের ‘সাম্প্রদায়িক মন : ধর্ম নিরপেক্ষ মুখ’।

মূলমঞ্চের আয়োজন : গতকাল বিকালে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে নজরুলচর্চা : অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহীত উল আলম, কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ ও কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত নজরুল গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুরের আলো সংগীত একাডেমি’র শিল্পীরা। এ ছাড়াও একক  সংগীত পরিবেশন করেন খালিদ হোসেন, লিলি ইসলাম, নাশিদ কামাল, সালাউদ্দীন আহমদ, লীনা তাপসী ও আবদুল ওয়াদুদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর