রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

তৃণমূলে প্রার্থী কেনাবেচা দলবদল

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৃণমূলে প্রার্থী কেনাবেচা দলবদল

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় টিকিট পেতে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ ছাড়াও নানা কূটকৌশল প্রয়োগ করার ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, নৌকা-ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া নিশ্চিত করতে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভোটার টানতে চলছে টাকা লেনদেনও। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তৃণমূলের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে রীতিমতো চলছে প্রার্থী কেনাবেচা। গোপনে দল বদলের কাজও সারছেন অনেক প্রার্থী। নিজ দল থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আগেই বিভিন্ন ইউনিয়নে অন্য দলে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে প্রধান দুই দল ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত অন্য দলেও যোগ দিচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত কারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন— তা নিয়ে লবিং-তদবিরের ওপরই সব কিছু নির্ভর করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কোনো দল ভিতরে ভিতরে মনোনয়নবঞ্চিতদের দলে টানার চেষ্টায় আছে। দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার চিন্তাও আছে অনেকের। এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজধানী ঢাকায়ও। তফসিলের পর দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিটি দল একজন করে প্রার্থী দিতে পারবে। জানা গেছে, যেসব ইউপিতে বর্তমানে জাপা, জামায়াত সমর্থক চেয়ারম্যান রয়েছেন— তারা এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থিতা পাওয়ার জন্য তদবির করছেন। গোপনে দলে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে আওয়ামী লীগের সমর্থনবঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বিএনপি-জাপার প্রার্থী হওয়ার জন্য দল বদল করছেন। তবে সবই হচ্ছে গোপনে, যাতে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় দলীয় টিকিট নিয়ে প্রার্থী হতে পারেন। স্থানীয় এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দলের সদস্য থাকার নির্ধারিত কোনো সময়সীমা না থাকায় গোপনে এমন দল বদল চলছে বলে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। বিশেষ করে জামায়াতের নিবন্ধন না থাকায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বিএনপি থেকে মনোনয়ন নেওয়ার জন্য বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন। আবার বর্তমানে মাঠপর্যায়ে জাপার তেমন দলীয় দাপট না থাকায় জাপার প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ার জন্য উপজেলা, জেলা কমিটিকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনের আগেই দলীয় টিকিট নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। কয়েক দিনের মধ্যে তৃণমূল থেকে দলীয় প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাই আজকালের মধ্যে প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থী।

তৃণমূলের মতামতে প্রার্থী : নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে চেয়ারম্যান পদে দলের একক প্রার্থী ঠিক করতে জেলা নেতাদের চিঠি পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন (যে ইউনিয়নে নির্বাচন হবে) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে ছয় সদস্যের নির্বাচনী বোর্ডকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মনোনীত প্রার্থীর নাম ধানমন্ডি কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। অন্যদিকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক— এ পাঁচজন মিলে চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম অনুমোদন করার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করবেন। পরে কেন্দ্রে তা চূড়ান্ত করা হবে।

সহজে প্রার্থিতা ইউপিতে : অন্য নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা ও টিআইএন নম্বর দেওয়ার বিষয়ে প্রার্থীদের বাধ্যবাধকতা নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নেই কোনো শর্ত। তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে দলীয় প্রত্যয়ন লাগবে। ঋণখেলাপি, সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পাঁচ বছর পার না হলে এবং ইউনিয়ন পরিষদের ঠিকাদার হলে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হবে। এতে প্রস্তাবক-সমর্থকের স্বাক্ষর লাগবে। তারা একই পদের অন্য মনোনয়নপত্রে সই দিতে পারবেন না; এক ব্যক্তি একাধিক এলাকায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন না। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ লাখ টাকা ও সদস্য পদে এক লাখ টাকা ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা ও সদস্য ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে ঘোষিত তফসিল অনুসারে ৭৫২ ইউপির ভোট হবে ২২ মার্চ। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ পাবেন চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য প্রার্থীরা। ২ মার্চ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন বৈধ প্রার্থীরা। তারা ৩ মার্চ প্রতীক পেয়ে প্রচার শুরু করতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর