সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
চালান জালিয়াতি

জাইকার দেওয়া ভ্যাট ব্যবসায়ীর পেটে

রুহুল আমিন রাসেল

দেশের অন্যতম উন্নয়ন-সহযোগী অংশীদার জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি—জাইকার দেওয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট-১১ চালান জালিয়াতি করে সরকারের রাজস্ব আত্মসাৎ করেছে একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান। জাইকার আবেদনের পর তদন্তে এ প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদফতর (ডেডো)। সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। জেনেভা কনভেশন অনুযায়ী, বিদেশি কোনো দূতাবাস বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু রাজস্ব সুবিধা অন্য দেশকে দিয়ে থাকে। মূলত কূটনীতিক সম্পর্কে সম্মান জানিয়ে এ সুবিধা আদান-প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোকে সরকার যেমন এ সুবিধা দেয়, তেমনি বিদেশেও এ দেশের দূতাবাসসমূহ একই সুবিধা পেয়ে থাকে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এ সুবিধা পায় জাইকা। এ দেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে জাইকা ও বন্ধুরাষ্ট্র জাপানের অবদান এবং তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি বরাবরই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে সরকার। তাই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো দাফতরিক কেনাকাটার বিপরীতে দেওয়া ভ্যাট সরকার জাইকাকে ফেরত দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে ডেডোর দায়িত্ব হচ্ছে রপ্তানিপণ্য বা সেবা উত্পাদনে ব্যবহূত উপকরণে পরিশোধিত শুল্ক-কর ফেরত বা প্রত্যর্পণ করা। কূটনীতিকদের জ্বালানি তেলের কর প্রত্যর্পণ করা। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের কনজাম্পশনের লক্ষ্যে উপকরণ-উত্পাদন সহগ ইস্যু করা।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময় পর্যন্ত এই তিন মাসের কেনাকাটার বিপরীতে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া ভ্যাট ফেরত চেয়ে গত বছর ১০ জুন ডেডো বরাবর আবেদন করে জাইকা। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের সঙ্গে দাখিল করা একটি মূসক-১১ চালানে অন্তর্ভুক্ত তথ্যে অসামঞ্জস্য দেখে অর্থ ফেরতের আগে তদন্তে নামে ডেডো। তদন্তে জানা যায়, জাইকার দেওয়া এক লাখ ৬৭ হাজার ১২৭ টাকার ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি ‘পার্টনার ইন সোশ্যাল সেকমান ট্রা দেব (পিএসএসএমআরটিডি)’। এরপর ভ্যাট চালানে দেওয়া পিএসএসএমআরটিডির ঠিকানা রাজধানীর মগবাজারের ৪৮৭ নয়াটোলায় যায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাটের সিদ্ধেশ্বরী সার্কেল। সেখানে গিয়ে সরকারের এ সংস্থাটি পিএসএসএমআরটিডির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। আবার মূসক-১১ চালানে পিএসএসএমআরটিডির ভ্যাট নিবন্ধনের যে ১২ ডিজিটের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে তাও সঠিক নয়। এমন প্রেক্ষাপটে অনাদায়ী মূসক আদায়, রিটার্ন দাখিল না করা এবং মূসক ফাঁকিতে জড়িত অভিযোগে পিএসএসএমআরটিডি নামের এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে ঢাকা (দক্ষিণ) কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে ডেডো। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডেডোর মহাপরিচালক ফারজানা আফরোজ।

সর্বশেষ খবর