মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম

লবিংয়ে জেরবার আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষমতা তৃণমূল নেতাদের হাতে দিলেও পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্ধিত সভা করে ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী চূড়ান্ত করে পাঠাবে উপজেলায়। সে তালিকা পাঠাবে জেলা নেতাদের কাছে। পরে যৌথভাবে ৬ নেতার যৌথ স্বাক্ষরে সে তালিকা পাঠানো হবে কেন্দ্রে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। কোথাও জেলা নেতারা, আবার কোথাও উপজেলা নেতারাই সর্বেসর্বা হিসেবে প্রার্থী ঠিক করছেন। আবার কোথাও তারা একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারেননি। দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন কেন্দ্রের ওপর। এ নিয়ে লবিং-গ্রুপিংয়ের শেষ নেই আওয়ামী লীগে। প্রথম দফায় ৭৩৯ ইউপির মধ্যে গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক ইউনিয়নের প্রার্থী তালিকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থীর তালিকা পাঠানো হয়েছে। দলটির দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এখনো (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) পুরো তালিকা হাতে পাইনি। আজ সকালের মধ্যেই সব তালিকা হাতে চলে আসবে।

প্রত্যেক ইউনিয়নের একক প্রার্থী আসেননি জানিয়ে তিনি বলেন, শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে জমা পড়েছে। এ ছাড়াও তৃণমূলে প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আজ রাতে প্রথম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গণভবনে বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/পৌরসভা/ইউনিয়ন নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড। 

সূত্রমতে, দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য এরই মধ্যে তৃণমূলের ইউনিয়নগুলোতে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। ইতিমধ্যে সরকারি দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বেশির ভাগ ইউনিয়নে ২ থেকে ৭ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকায় একক প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে তৃণমূলে বিদ্রোহ, সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন নেতারা। ঝামেলা এড়াতে কোনো কোনো ইউনিয়নে দলীয় প্রতীক ছাড়াই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে।

জানা গেছে, একক প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা তাদের। প্রত্যেক ইউনিয়নে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সিদ্ধান্তহীনতাসহ যোগ্য ও একক প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন নেতারা। এ ছাড়া কেন্দ্র থেকে চাপমুক্ত হয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের কথা বলা হলেও বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের প্রভাব থাকায় যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে সমস্যায় পড়ছে তৃণমূল। এক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের অনেক নেতা। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে জেলার একজন বিতর্কিত নেতা প্রভাব খাটিয়ে তার মন মতো প্রার্থী ঠিক করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত পৌরসভা নির্বাচনেও ওই নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল।  সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনজিৎ কর্মকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দলীয় মনোনয়ন দিতে ফরম বিক্রি করেছি। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠাতে সক্ষম হব।   কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ থেকে ৫ জন প্রার্থী নির্বাচনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে জেলা নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী মাঠ ছাড়তে রাজি নন এদের অনেকেই। জেলা পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, যারা প্রার্থী হতে চান তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী। এ কারণে চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম ঠিক করতে পারেননি জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এত বেশি সংখ্যক প্রার্থীর ভিড়ে একক প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কেন্দ্র থেকে এত কম সময়ে একক প্রার্থী বাছাই করার নির্দেশনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলার কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তারা বলেছেন, শত শত ইউনিয়ন পরিষদে একে তো একাধিক প্রার্থী, অন্যদিকে একক প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য মাত্র কয়েক দিন সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর