শিরোনাম
রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
এটিএম বুথে লুট

ধরা পড়েনি কেউ আতঙ্কে গ্রাহকরা

আলী রিয়াজ

এটিএম কার্ড জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা কেউ ধরা না পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন ব্যাংক গ্রাহকরা। ৯০ লাখ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা টাকা চুরির ঝুঁকিতে রয়েছেন। ব্যাংকগুলো এটিএম বুথে অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন না করায় অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে অনেক গ্রাহকই তাদের হারানো টাকা এখনো ফেরত পাননি। শুধু ইস্টার্ন ব্যাংক ২৪ জন গ্রাহকের টাকা ফেরত দিয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলো বলছে, এখনো হিসাব নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হলেই সবাইকে  টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রশ্নে ব্যাংকগুলো বলছে, অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন না করা পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশের সব ব্যাংকের ইস্যু করা মোট এটিএম কার্ড রয়েছে ৯০ লাখ। এর মধ্যে ঢাকার কয়েকটি বুথ থেকে তথ্য নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর। বিষয়টি প্রথম সিটি ব্যাংকের একটি শাখায় ঘটলেও বিষয়টি তারা গোপন করে। পরে ইউসিবি ব্যাংকে একই ঘটনা ঘটলে তারাও বিষয়টি গোপন রাখে। এরপর ইস্টার্ন ব্যাংকের ঘটনার সময় বিষয়টি সামনে আসে। এই ঘটনায় শুধু ঢাকার কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির তথ্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলার বুথগুলো থেকে যদি কেউ জালিয়াতি করে তথ্য নিয়ে থাকে তা এখনো জানা যায়নি। অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বিষয়টি সামনে আসায় জালিয়াত চক্র আপাতত চুপ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার এটিএম বুথ থেকে যদি তথ্য নিয়ে থাকে সেটা দিয়ে পরে আবারও জালিয়াতি করা সম্ভব। এখন এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন করা হবে। কিন্তু আগে নিয়ে থাকলে সেটা কীভাবে ঠেকানো যাবে? জানা গেছে, ঘটনার পর এক সপ্তাহের বেশি পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সবাই টাকা ফেরত পাননি। ইস্টার্ন ব্যাংক ২৪ গ্রাহকের ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। এই ঘটনায় অন্য ব্যাংকের মধ্যে ইউসিবি, সিটি, এমটিবি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে যাদের টাকা খোয়া গেছে তাদের ফেরত দেওয়া হয়নি। ব্যাংকগুলো বলছে, কোন গ্রাহক কত টাকা হারিয়েছেন তা নিশ্চিত হতে কিছুটা সময় লাগছে। খুব দ্রুত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এটিএম বুথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছয় দফা নির্দেশনার মধ্যে অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস কোনো ব্যাংক স্থাপন করেনি। ফলে পূর্বে কোনো গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে থাকলে এখনো জালিয়াতির শঙ্কা রয়েছে বলে গ্রাহকরা মনে করছেন। এদিকে এটিএম জালিয়াতির ঘটনা জানাজানির পর এক সপ্তাহের বেশি হলেও কোনো আসামি ধরা পড়েনি। ফলে এখন জানা সম্ভব হয়নি কারা এর সঙ্গে জড়িত। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, প্রথমে পাঁচজন ও পরে তিনজন বিদেশিকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন গ্রেফতারের গুজব থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকগুলোর টেকনিক্যাল বিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পূর্ব ইউরোপের যেসব নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাদের নাম, পরিচয়, বাংলাদেশে অবস্থানের সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে গোয়েন্দা তদন্তে ধরা পড়েছে। এটিএম বুথের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তারা গাঢাকা দিয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছে এ দেশের অপরাধীরা। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অপরাধীরা তাদের সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, প্রায় ১২ হাজার কার্ডের তথ্য চুরি হতে পারে বলে আমাদের ধারণা। ওই ১২ হাজার কার্ডের লেনদেন বন্ধ রেখে গ্রাহকদের নতুন কার্ড দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এই জালিয়াতির ঘটনা কারা ঘটিয়েছে বা কোনো ব্যাংকের কর্মীরা জড়িত কি না সেটা আমাদের জানা নেই। আমরা ভিডিও ফুটেজে ছবি দেখেছি। নাম পরিচয় পাইনি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করছে।

সর্বশেষ খবর