বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বৃষ্টি কাঁদাল প্রকাশকদের

মোস্তফা মতিহার

বৃষ্টি কাঁদাল প্রকাশকদের

বসন্তের দিনে যদি বৃষ্টি আসে তাহলে ফাগুনের পলাশ রাঙা বিকাল সৌন্দর্য হারাবে এটাই তো স্বাভাবিক। বৃষ্টি সবসময় হৃদয়কে ভালোলাগার ছোঁয়ায় সিক্তই করে না, কখনো কখনো বৃষ্টি হৃদয়কে কাঁদায়ও। ঋতুরাজের এই সময়টাতে আকাশ তো কাঁদার কথা না, তারপরও কালো মেঘের কারণে অসময়ে কেঁদেছে আকাশ। বসন্তের দিনে আকাশ মন খারাপ করে প্রকাশকদের মনও খারাপ করে দিয়েছে। অসময়ে আকাশ কেঁদে প্রকাশকদের কাঁদাবে, প্রকাশকদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাবে এটা জানলে তো আর লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না প্রকাশকদের। মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টি এবং গতকালকের বৃষ্টির কারণে অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রকাশকদের মাথায় হাত পড়েছে। প্রায় দুই শতাধিক প্রকাশনা সংস্থার বেশিরভাগ বই ভিজে মাথায় হাত পড়েছে প্রকাশকদের। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক প্রকাশক জানান, অপ্রত্যাশিত এই বৃষ্টির কারণে তাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয় বলেও জানান তারা।

 সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভের দিককার টিন দিয়ে তৈরি বেষ্টনী উড়ে গেছে শিলাঝড়ে। অনেক স্টলের সাইনবোর্ডের নাম-নিশানাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক স্থানে হাঁটু পর্যন্ত পানি। সেই পানি প্রবেশ করেছে স্টলগুলোতে। ভিতরে ভেজা বইয়ের স্তূপ। যেগুলো সামান্য ভিজেছে সেগুলো শুকনো কাপড় দিয়ে মুছছিলেন বিক্রয়কর্মীরা। অনেক জায়গায় কাদার জন্য হাঁটা যাচ্ছে না। এককথায় মাত্র কয়েক মিনিটের শিলাঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে প্রাণের মেলা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রমনা কালীমন্দিরের পাশের স্টলগুলো। সেখানে হাঁটুপানি। প্রতিটি স্টলেই পানি ঢুকেছে। নষ্ট হয়েছে লাখ লাখ টাকার বই। এই দিকে প্রায় পঞ্চাশটির মতো স্টল রয়েছে। এরই একটি অন্বেষা প্রকাশনী। এর স্বত্বাধিকারী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘এ দিকটা অনেক নিচু। পুরো জায়গায় ডুবে গেছে পানিতে। বেশিরভাগ বই ভিজে গেছে। গতকালকের মেলার সার্বিক দিক নিয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘বৃষ্টির ফলে বৈদ্যুতিক সংযোগের ভিতরে পানি জমে গেছে। এমন অবস্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে, যে কোনো ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মেলা বন্ধ করে দিয়েছি।’ তবে আজ বৃহস্পতিবার মেলার নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে বলে জানান তিনি। বৃষ্টির কারণে গতকাল ২৪তম দিনে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য খোলা ছিল গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ। বিকাল ৩টার পরিবর্তে গতকাল ২৪তম দিনে মেলার দ্বার উন্মোচন করা হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়। আর বন্ধ করে দেওয়া হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির কারণে গতকাল ২৪তম দিনে মেলায় কোনো নতুন বই প্রকাশিত হয়নি।

মেলামঞ্চের আয়োজন : গতকাল মেলার মূলমঞ্চ ও তার আশপাশে পানি জমায় প্রতিদিনের মেলামঞ্চের আয়োজন হয় একাডেমির সভাকক্ষে। বিকাল ৪টায় সেখানে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ও মান উন্নয়নে সমস্যা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক গবেষক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কাজী ফারুক আহমেদ, মনজুর আহমদ এবং শাহিনুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে শামসুর রহমান সেমিনার হলে।

সর্বশেষ খবর