শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

মালিক পক্ষের পুরনো টালবাহানা প্রতারণা

মানিক মুনতাসির

সাভারের নির্মাণাধীন ট্যানারি পল্লীতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি)। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এ পল্লীর অভ্যন্তরের রাস্তাঘাটের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। শেষ হয়েছে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। বসেছে বিদ্যুতের খুঁটি। পানি শোধনাগারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যে কোনো সময় দেওয়া হবে গ্যাস-বিদ্যুৎ আর পানির সংযোগ। সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ট্যানারি মালিকরা কারখানা স্থানান্তরে টালবাহানা করছেন বলে অভিযোগ শিল্প মন্ত্রণালয়ের। চামড়া শিল্প নগরী ঢাকা, প্রকল্পের কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ পুরো প্রকল্প এলাকায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সর্বশেষ ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতির তথ্য ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে প্রকল্প পরিচালক বলছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে। ট্যানারি পল্লীতে বরাদ্দ দেওয়া প্লট থেকে কিছু কিছু প্লট ট্যানারি মালিকরা বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে যে, কারখানা সরানোর জন্য সরকার থেকে পাওয়া অনুদানের টাকা বিনিয়োগ করেছেন ফ্ল্যাট, বাড়ি-গাড়ি কেনায়। অথচ সরকার এ টাকা দিয়েছিল হাজারীবাগ থেকে কারখানা সরিয়ে সাভারে নেওয়ার জন্য। যদিও ট্যানারি মালিকরা প্লট বিক্রি ও অনুদানের টাকা অন্য খাতে ব্যয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। প্লট বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিল করা হবে। জানা গেছে, সিইটিপির কাজ হচ্ছে চারটি মডিউলে আট ভাগে। এর মধ্যে দুটি ইউনিটের কাজ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে ট্যানারি পল্লীতে যেসব মালিক কারখানা স্থানান্তর করেছেন তাদের কেউই কারখানা চালু করেননি। উল্টো হাজারীবাগের পুরনো অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে কারখানার ইউনিটগুলো চালু রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দিব্বি। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ট্যানারি মালিকদের বিপরীতে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থের ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৫৩ কোটি ছাড় করা হয়েছে। কাজের গতির ওপর নির্ভর করছে বাকি অর্থ ছাড়ের বিষয়। ট্যানারি পল্লী হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরের জন্য ১০ জানুয়ারি ট্যানারি শিল্প মালিকদের ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রীর এ কঠোর হুঁশিয়ারির প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, আলটিমেটাম ও বাস্তবতা এক নয়। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) মহাসচিব শওকত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাভারের কাজ এখনো অনেক বাকি। কাজ শেষ না করে সেখানে স্থানান্তর সম্ভব নয়। হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্প ৫০-৬০ বছরের পুরনো। হাইকোর্টের নির্দেশ, আন্তর্জাতিক চাপ ও সরকারের সহযোগিতায় এ শিল্প সাভারে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ প্রকল্পের মূল কাজগুলো ডিসেম্বর, ২০১৫-এ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো চলছে। ফলে কাজ অসমাপ্ত রেখে মালিকরা কারখানা স্থানান্তর করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে বরাদ্দ পাওয়া প্লটে স্থাপনা করতে ৭০-৮০ ফিট নিচ থেকে পাইলিং করতে হয়। সরকার যে অর্থ দিচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু সরকার বলছে, যেহেতু ট্যানারি কারখানায় ব্যবহৃত মেশিন অনেক ভারী, তাই স্থাপনা শক্তিশালী করে তৈরি করা হচ্ছে সেখানকার অবকাঠামো। জানা গেছে, সাভারে নির্মাণাধীন ট্যানারি পল্লীর ২০৫টি প্লটের মধ্যে ১৫৫টি শিল্প ইউনিট বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে ১৫৩টির লেআউট প্ল্যান অনুমোদন করা হয়। এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট কর্তৃক একটি প্লটের মালিককে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে।

শর্ত পালন করতে না পারায় তিনটি প্লটের বরাদ্দ বাতিল করেছে সরকার। এ ছাড়া হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে রেখেছেন সাতটি প্লট এবং একটি প্লটের বিপরীতে মামলা থাকায় বরাদ্দপত্র জারি করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর