বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

নারীর বাসে ওঠাই মুশকিল

নারীর বাসে ওঠাই মুশকিল

রাজধানীর নারীদের গণপরিবহনে যাতায়াত করার জন্য প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করতে হয়। এই নগরীতে বাসে ওঠাই নারীদের জন্য মুশকিল। আবার কিছু বাসের হেলপার অফিস চলাকালীন ও ছুটির পর যাত্রীর চাপ যখন বেশি থাকে তখন ইচ্ছাকৃতভাবেই নারীদের বাসে ওঠাতে চান না। ‘সিট নাই’ বলে তাদের বাসে উঠতে বাধা দেন। এ জন্য অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে দিনের পর দিন নারীযাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেও না-দেখার ভান করছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বাসগুলোতে নারীযাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে এ আসন থেকেও যেন নেই। কিছু ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসন উদ্ধার করতে গিয়ে পুরুষযাত্রীদের কাছ থেকে অশ্রাব্য বাক্যবাণে জর্জরিত হওয়ার ভয়ে নারীরা দাঁড়িয়েই গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার কখনো নারীদের বাসচালকের পাশের উত্তপ্ত ইঞ্জিনের ওপর সিটটিতে বসে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। আগের চেয়ে বিভিন্ন পেশায় নারীদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পুরুষদের পাশাপাশি এখন নারীদেরও গণপরিবহনে ধাক্কাধাক্কি করে, দাঁড়িয়ে, বাসের পা-দানিতে ঝুলে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অর্থাৎ নারী কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে পরিচালিত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) মহিলা বাস সার্ভিসের সেবাও অপর‌্যাপ্ত। নানা অব্যবস্থাপনার ঘেরাটোপে পড়ে ‘মহিলা বাস সার্ভিস’ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নারীযাত্রীরা। সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, বাসে পুরুষযাত্রীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, কখনো বখাটেদের কারণে সৃষ্ট অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়ে নারীদের হররোজই ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার এই যাত্রীদের যেন এটাই নিয়তি। আর নিজস্ব গাড়ি বা সিএনজিতে করে গন্তব্যে যাওয়ার সামর্থ্য কজনেরই বা আছে। নারীযাত্রীদের কথা বিবেচনা করে বেশ কয়েক বছর আগে বিআরটিসি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, প্রতিটি মিনিবাসে কমপক্ষে ছয়টি এবং বড় বাসে কমপক্ষে নয়টি সংরক্ষিত আসন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখতে হবে। কিন্তু নগর পরিবহনগুলোর এ প্রজ্ঞাপন মেনে বাস চালানোর নজির তেমন দেখা যায় না। হাতে গোনা কয়েকটি বাস সংরক্ষিত আসনের এ আইন মেনে চললেও বেশির ভাগই মানে না। নগরীর শাহবাগ, ফার্মগেট, ধানমন্ডি ও মিরপুর এলাকার বেসরকারি বাসগুলোতেও প্রায়ই সংরক্ষিত আসন নিয়ে পুরুষদের বিরুদ্ধে নারীদের কথাকাটাকাটিতে জড়াতে দেখা যায়। অনেক পুরুষ আবার মহিলাদের সম-অধিকারের কথা বলে ইচ্ছা করেই সংরক্ষিত আসন না ছাড়ার অজুহাত দেখান! অফিস টাইমে অনেক বাসচালক ও হেলপার মহিলাদের ‘সিট নাই’ বলে বাসে তুলতে চান না। এর কারণ জানতে চাইলে এক হেলপার নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মহিলাগো বাসে তুললে তারা একজনই তিনজনের জায়গা নেয়। আবার একটু ধাক্কা লাগলেই চিল্লাচিল্লি করে। আমাগো খেপ কইমা যায়। এই জন্য ভিড় যখন বেশি হয় মহিলা প্যাসেনজার তুলি না।’ এ কারণে এখন অফিস-ফেরত ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীযাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে বাসের পা-দানিতে ঝুলেও গন্তব্যে যেতে দেখা যাচ্ছে।

ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুজহাত বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে এত চাপ থাকে যে পুরুষদের সঙ্গে আমাদের ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠতে হয়। অনেক সময় না পেরে নিরুপায় হয়ে বাসের পা-দানিতে দাঁড়িয়েই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হই।’ অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় কম বাস, নির্দিষ্ট সময় মেনে না চলার কারণে বিআরটিসির মহিলা বাস সার্ভিস থেকে ভালো সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতে ক্রমাগত লোকসান হওয়ার কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাসের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। মহিলাদের বিড়ম্বনার কথা ভেবে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিআরটিসি মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে বাস সার্ভিস চালু করে। নারীযাত্রীদের অভিযোগ, বাসগুলো পথে অকারণে যথেষ্ট সময় নষ্ট করে। এক নারীযাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘সময় মেনে বিআরটিসির বাসগুলো ছাড়ে না। এ জন্য এতে সব সময় চলাচল করা যায় না।’ আবার অনেক নারী আছেন, যারা প্রচার না থাকায় এ বাস সার্ভিস সম্পর্কে তেমন কিছু জানেনই না। বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল এ আর পারভেজ মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে রাজধানীতে বিআরটিসির ২২টি বাস চলাচল করছে শুধু নারীদের জন্য। দুজন করে মহিলা হেলপার একেকটি বাসে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, যানজটের কারণে বাসগুলো সময়মতো নির্দিষ্ট স্টপেজে যেতে পারে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর