বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ধীরগতি, সমন্বয়হীনতায় এপ্রিলে মেট্রোরেলের কাজে অনিশ্চয়তা

নিজামুল হক বিপুল

ধীরগতি, সমন্বয়হীনতায় এপ্রিলে মেট্রোরেলের কাজে অনিশ্চয়তা

দফায় দফায় তারিখ নির্ধারণ করলেও মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। তবে ১৫ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্পের ডিপো নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কাজ উদ্বোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাজে ধীরগতি, সমন্বয়হীনতা আর টেকনিক্যাল লোকের অভাবের কারণেই গত চার মাসেও কাজ শুরু করা যায়নি। এ কারণে এবারও তারিখ ঠিক থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার যানজট নিরসন এবং নগরবাসীর যাতায়াত সুবিধার জন্য সরকার প্রথম ফেইজে রাজধানীর উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত প্রায় ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালের শেষ দিকে মেট্রোরেলের একটি অংশকে অপারেশনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত কাজও শুরু হয়। আর ২০২১ সালের শেষ নাগাদ পুরো প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ২২ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপান আন্তর্জাতিক কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার জোগান দেবে জাইকা। কয়েক ধাপে এ অর্থ ছাড় করা হবে। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সব ধরনের কারিগরি সহায়তাও দেবে জাপান। সূত্র জানায়, আটটি প্যাকেজে মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১-এ আছে ডিপো নির্মাণের বিষয়টি। উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প এলাকায় রাজউকের ৫৪ একর জমির ওপর তৈরি করা হবে প্রকল্পের মূল ডিপো। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক অপারেশন কন্ট্রোল রুম, ওয়াশিং রুম, ওয়ার্কশপ থেকে শুরু করে এ প্রকল্পের সব যান্ত্রিক বিষয়। ইতিমধ্যে ডিপো নির্মাণের জন্য নকশার কাজও শেষ হয়েছে। পাশাপাশি শেষ হয়েছে প্রকল্প এলাকার মাটি পরীক্ষার কাজ। ডিপো নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ২৭ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু করা যাচ্ছে নানা অসংগতির কারণে। বিশেষ করে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতা এবং অদক্ষ জনবলের কারণে বারবার তারিখ করেও ডিপো নির্মাণের কাজে হাত দিতে পারছে না সরকার। সূত্র জানায়, মেট্রোরেল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেই গত বছর জানানো হয়েছিল, ২০১৬ সালের শুরুতেই মেট্রোরেল প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে। আর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতিপূর্বে দুই-দুইবার তারিখ করেছিলেন মূল কাজ আনুষ্ঠানিক শুরুর বিষয়ে। মন্ত্রী গত বছর জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বরেই ডিপো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। কিন্তু মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত না হওয়ায় ডিসেম্বরে কাজ শুরু করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরুর কথা বলেছিলেন। এযাত্রায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা ও তাদের কাজের ধীর গতির কারণে দ্বিতীয় দফায়ও শুরু করা যায়নি কাজ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ১৫ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পের মূল কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি সম্মতি জানালে এ সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন প্রকল্পের মূল কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এযাত্রায়ও মূল কাজের উদ্বোধন করা যাবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতা, কাজের ক্ষেত্রে অদক্ষতা এবং তাদের ধীর গতির কারণেই বারবার তারিখ করেও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের কাজ শুরুর ক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে প্রকল্পে টেকনিক্যাল লোকবল না থাকা। বিশেষ করে, প্রকল্প পরিচালক টেকনিক্যাল না হওয়ায় কাজের ক্ষেত্রে প্রকট সমস্যা হচ্ছে। মেট্রোরেল হচ্ছে একেবারেই একটি টেকনিক্যাল বিষয়। এখানে যাকে প্রকল্পের পিডি করা হয়েছে তিনি নন-টেকনিক্যাল ব্যক্তি। একইভাবে প্রকল্পে আরও অনেকেই আছেন, যারা টেকনিক্যাল নন। এ কারণেই প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা।

সর্বশেষ খবর