শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাধা উপেক্ষা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব

স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাধা উপেক্ষা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব

স্বাধীনতা প্রদকপ্রাপ্ত গুণীজনদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসুন, সবাই মিলে এদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করি। সব বাধা উপেক্ষা করেই মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। কেউ আমাদের অগ্রগতিকে রুখতে পারবে না। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক ২০১৬ প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজনই পেয়েছেন মরণোত্তর। অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম তার অনুভূতির কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, এ বছর ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। যারা কাজ করেন, তারা পুরস্কারের আশায় কাজ করেন না। দেশের সেবা, মানুষের কল্যাণ— এই চিন্তা মাথায় রেখেই তারা কাজ করে যান। আজকে গুণীজনদের এই পদকপ্রাপ্তি আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনেকেই আছেন যাদের খবর কেউ জানে না। তবে, আমরা চাই যে যেখানে সামাজিক উন্নয়নে বা দেশের সাহিত্য জগতে বা সাংস্কৃতিক জগতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন, আমরা যেন তাদের সম্মান করতে পারি। সে তথ্য আমাদের জানা থাকা একান্তভাবে দরকার। কাজেই আমি আশা করি আগামীতে সে তথ্য পাব এবং তাদের আমরা সম্মানিত করতে পারব।  শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। যে সংগঠন জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশের মানুষকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা যখন সরকারে এসেছি, তখন সত্যিকারভাবে এদেশের মানুষ উন্নয়নের মুখ দেখেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখন থেকে এদেশে উন্নতি শুরু হয়েছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, দেশকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। আমি বিশ্বাস করি আমরা দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে সক্ষম হব। আমরা সব বাধা উপেক্ষা করে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে সমর্থ হব।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো একটি জাতির উন্নয়নের জন্য একটা দিকনির্দেশনা থাকতে হয়, একটা দিকদর্শন থাকতে হয়, ভিশন থাকতে হয়। সেটা মাথায় রেখেই আমরা ঘোষণা দিয়েছি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করব। আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশ ইতিমধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী জাতি। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব। আর সে লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও উন্নত হোক, সমৃদ্ধ হোক। বাংলাদেশ নিম্নে থাকবে না, ২০২১ সালের আগে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। আমরা আরও অনেক দূর যেতে যাই। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ। স্বাধীনতা পদক পেলেন যারা : পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ হলেন— মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এম ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, মৌলভী আচমত আলী খান (মরণোত্তর), স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম বীরোত্তম, রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার শহীদ শাহ আবদুল মজিদ (মরণোত্তর), রাঙামাটির মহকুমা প্রশাসক শহীদ এম আবদুল আলী (মরণোত্তর), এ কে এম আবদুর রউফ (মরণোত্তর), কে এম শিহাব উদ্দিন (মরণোত্তর) এবং সৈয়দ হাসান ইমাম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অমর ২১ ফেব্রুয়ারির স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য রফিকুল ইসলাম (মরণোত্তর) ও আবদুস সালাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তোষা ও স্থানীয় জাতের পাটের জেনোম সিক্যুয়েন্স আবিষ্কারের জন্য কৃষি গবেষক অধ্যাপক মাকসুদুল আলম (মরণোত্তর) এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রাফি খান (এমআর খান), সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও গবেষক অধ্যাপক রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা।

এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং দেশের সমুদ্রসীমার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় নিরলস প্রয়াস চালানোর জন্য বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। নৌ-বাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বাহিনীর পক্ষে এবং অন্যরা স্ব স্ব পুরস্কার গ্রহণ করেন।

মরণোত্তর পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মরহুম মৌলভী আচমত আলী খানের পক্ষে তার ছেলে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, শহীদ শাহ আবদুল মজিদের পক্ষে তার ছেলে মামুন মাহমুদ শাহ, শহীদ এম আবদুল আলীর পক্ষে তার মেয়ে নাজমা আক্তার লিলি, মরহুম এ কে এম আবদুর রউফের পক্ষে তার স্ত্রী শাহানারা রউফ, মরহুম কে এম শিহাব উদ্দিনের পক্ষে তার ভাই ডা. কে এম ফরিদউদ্দিন, মরহুম রফিকুল ইসলামের পক্ষে তার স্ত্রী দিলরাজ বুলি ইসলাম এবং মরহুম অধ্যাপক মাকসুদুল আলমের পক্ষে তার স্ত্রী রাফিয়া হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করেন। 

সর্বশেষ খবর