সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
উদ্ভাবন

বাটন মাশরুমের সহজ চাষ পদ্ধতি

নাহিদুর রহমান হিমেল

বাটন মাশরুমের সহজ চাষ পদ্ধতি

সুস্বাদু খাবার মাশরুম। বছর কয়েক আগেও বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় মাশরুমের তেমন প্রচলন ছিল না। গ্রামীণ সমাজে এটি ব্যাঙের ছাতা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সুস্বাদু খাবার হিসেবে শহরের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জেও এখন এই সবজির পরিচিতি বেড়েছে। তাই এ সবজির গুণ, মান আর পুষ্টি সমৃদ্ধিতে চলছে নানা গবেষণা। প্রতিনিয়ত আবিষ্কার হচ্ছে নানা প্রজাতির মাশরুম। আরও সহজ হয়ে উঠছে মাশরুমের চাষ পদ্ধতি। সমপ্রতি বিশ্বসেরা বাটন মাশরুমের চাষিবান্ধব সহজ চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন নামের এক গবেষক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি গবেষক ও একজন সফল মাসরুম উদ্যোক্তা। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই মাশরুমটির বার্ষিক উত্পাদন দুই মিলিয়ন মেট্রিক টন। বাটন মাশরুমের বৈজ্ঞানিক নাম অমধত্রপঁং নরংঢ়ড়ত্ঁং (অ্যাগারিকাস বাইস্পোরাস)। ফরাসি উদ্ভিদবিদ টার্নফোর্ট ১৭০৭ সালে সর্ব প্রথম মাশরুমটির কৃত্রিম উত্পাদনে সফল হন। এরপর ১৮৯৩ সালে ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউট ঘোড়ার বিষ্টার কম্পোষ্টে চাষ করার জন্য এই মাশরুমের বিশুদ্ধ মাতৃবীজ উত্পাদন করে। পরে বিভিন্ন দেশের এই মাশরুম উত্পাদনে বিস্তর গবেষণা এবং বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু হয়। বাংলাদেশের বড় বড় সুপার মার্কেটে এই মাশরুম প্রতিকেজি ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয় বলেও জানা গেছে। বাটন মাশরুমের ঔষধি গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে গবেষক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাটন মাশরুম মোটামুটি ক্যালরিমুক্ত এবং দেহ গঠনের জন্য উপযোগী উন্নতমানের প্রোটিন, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-ডি, রিবোফ্লাবিন, নিয়াসিন সমন্বয়ের এক বিশুদ্ধ অর্গানিক পণ্য। এতে প্রচুর মিনারেল, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। মাশরুমটিতে রয়েছে হাইড্রোজিনের বিভিন্ন রূপভেদ, অ্যাগারিটিন এবং গাইরোমিট্রিন— যেগুলোর ক্যানসার প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে। এ জন্য প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধী উপকরণ হিসেবে খাদ্য তালিকায় সারা বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। বিশ্বের ১০০টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়। বাণিজ্যিকভাবে মাশরুমটির উত্পাদনে বিশাল স্থাপনা, মূল্যবান যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষিত জনশক্তি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন হয়। উন্নত দেশ এই মাশরুম উত্পাদনের জন্য ধান বা গমের খড়ের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সার মিশিয়ে এক টন পরিমাণ কম্পোস্ট তৈরি করে থাকে। কিন্তু এ দেশের প্রেক্ষাপটে বসতবাড়ির আশপাশে এই কম্পোস্ট তৈরি করা যায় না, কেননা এতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র গন্ধের সৃষ্টি করে। বাটন মাশরুম উত্পাদনের এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে কিছু কৃষি উপকরণ ব্যবহার করে কোনো ধরনের কম্পোস্ট তৈরি না করেই তা উত্পাদন করতে সক্ষম হয়েছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, কম্পোস্ট তৈরির চেয়ে এই পদ্ধতিতে খরচও অনেক কম। সরকার প্রতি বছর প্রক্রিয়াজাত প্রচুর বাটন মাশরুম আমদানি করে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে আমাদের দেশের সাধারণ মাশরুম উদ্যোক্তা ও মাশরুম চাষিরা প্রতি শীতে প্রচুর বাটন মাশরুম উত্পাদন করতে পারবে, যা জাতীয় আয়েও ভূমিকা রাখবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর