বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

রিজার্ভ লোপাট হ্যাকিং নয়, ডিজিটাল ডাকাতি : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা লোপাটকে হ্যাকিং নয়, ‘ডিজিটাল ডাকাতি’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। এজন্য সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবিও করেছে দলটি। ঘটনা কীভাবে সংঘটিত হয়েছে এ নিয়ে গতকাল দুপুরে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে একটি তথ্যপ্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়। দলটি দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভিতরের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজশে এ ঘটনা ঘটেছে; যাকে ‘হ্যাকিং’ নয়, ‘ডিজিটাল রোভারিং’ বা ডিজিটাল ডাকাতি বলা যায়।

শুরুতেই দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,    ‘রাজকোষের এ লুণ্ঠন আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর চরম আঘাতের শামিল। ভয়াবহ এ ঘটনায় দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি জনগণ আস্থা হারাবে। শুধু গভর্নরের পদত্যাগ এ সমস্যার সমাধান নয়, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারে না। তারা (সরকার) এখন পর্যন্ত এ ঘটনার কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে গবেষণার ভিত্তিতে কিছু জরুরি তথ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতেই আমাদের এ উপস্থাপনা।’ ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের একটি বিশ্লেষণাত্মক পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ শামা ওবায়েদ। তা প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ইন্টার-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কিং—সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ফিলিপাইনে রিজার্ভ ব্যাংক ও শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা স্থানান্তরের পুরো বিষয়টি তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে বলা হয়, কেবল দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা এ কাজ করা সম্ভব। বাইরে থেকে অন্য কারও পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়, অসম্ভব। শামা ওবায়েদ তার বিশ্লেষণে বলেন, ‘সুইফট বিশ্বপরিসরে ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনগুলোর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের তথ্য পায়। এজন্য রয়েছে রুদ্ধ মানসম্পন্ন নেটওয়ার্ক। প্রত্যেক সদস্য ব্যাংক লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে একটি একক পরিচিত কোড, সফটওয়্যার ও সেবা পায়; যার দ্বারা সুইফটনেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এটি প্রতিদিন ২ কোটি আর্থিক বার্তা আদান-প্রদান করে এবং এর সঙ্গে বিশ্বের ১০ হাজারের বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান জড়িত।’ এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ম্যাট বিশপ স্কাইপে সরাসরি তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, কোথাও না কোথাও খারাপ লোকদের দুরভিসন্ধি জড়িত। যে কোনো ব্যক্তির যার সুইফট সিস্টেমটি ব্যবহারের অনুমতি আছে এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ এ সিস্টেমে প্রবেশ করার অনুমতি নেই, এমন কেউ এতে জড়িত ছিলেন।’ ‘ম্যালওয়্যার’-এর মাধ্যমে ওই অর্থ লোপাটের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেন কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক। প্রতিবেদনের উপসংহারে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘এ লুণ্ঠন বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কারও কাজ। যাদের কাছে সুইফট কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড, ফিজিক্যাল কিসহ ডঙ্গল, বায়োমেট্রিকস শনাক্তকরণের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার রয়েছে। সব প্রামাণিক সাক্ষ্য, সুইফটনেট আর্কিটেকচার ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে এটা পরিষ্কার যে এ অর্থ লুণ্ঠন কোনো হ্যাকিংয়ের কারণে ঘটেনি। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি ডিজিটাল রোভারিং (ডিজিটাল ডাকাতি)।’ এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ ও সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর