বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা সম্ভব

বার্ন ইনস্টিটিউট ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা সম্ভব

‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি’ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন. যারা বড়লোক, তারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবেন। তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু দেশে সমমানের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের ডাক্তাররা যথেষ্ট মেধাবী। তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে, উন্নত ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত সম্ভব। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন সচিবালয় রোডে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার নামে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে এটাই দেশের প্রথম ইনস্টিটিউট।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সব নামকরা হাসপাতালের সঙ্গে দেশের হাসপাতালগুলোকে যুক্ত করে চিকিৎসা ব্যবস্থা নতুন ধারায় নিয়ে আসা হবে। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর সঙ্গে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবক্যামেরা থাকবে। যখন প্রয়োজন হবে, তারা মতামত নেবে, দেখবে। সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে। আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে চাই। স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকন, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নির্বাচন ঠেকানো আর সরকার পতনের আন্দোলনের নামে কয়েকটি রাজনৈতিক দল মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। পুলিশ, শিক্ষক, ছাত্র, বাস চালক, ট্রাক চালক, হেলপার, নারী, শিশু, এমন কোনো শ্রেণি-পেশার লোক নেই যারা তাদের (বিএনপি-জামায়াতের) হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। বার্ন ইউনিটের ডাক্তার নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় ভয়াবহ একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। বার্ন ইউনিটে এত বেশি পোড়া মানুষকে আনা হয়েছিল যে জায়গা হচ্ছিল না। আমি দেখেছি তখন সেখানকার ডাক্তার নার্সসহ যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা রাতদিন কী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এই ঘটনার পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই, দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু করা হবে। পোস্ট গ্রাজুয়েটদের জন্য আমরা চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করব। সেখানে নার্সিং ইনস্টিটিউটও থাকবে। সেখানে শুধু উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা হবে। কারণ, নিত্যনতুন রোগ দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশেই অগ্নিকাণ্ড যে কোনো সময় ঘটতে পারে। তাই দগ্ধরা যাতে সঠিক চিকিৎসা পায় এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উপযুক্ত লোকবল। সেজন্যই আজকের এই ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা। এই প্রকল্প খুব দ্রুত প্রণয়ন করা হয়েছে এবং আমরা অনুমোদন দিয়েছি, অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি। এর দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। সেনাপ্রধান আমাকে কথা দিয়েছেন অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এটা সম্পন্ন করে দেবেন। এ সময় ডা. সামন্ত সেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার চাকরি ?কিন্তু শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও তিনি দগ্ধ মানুষের সেবা করেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন ভবনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই যে পুরানা বিল্ডিং। এইগুলো না জানি কবে মানুষের মাথায় ভেঙে পড়ে! হ্যাঁ, যেটুকু হেরিটেজ দরকার, সেটুকু রাখা যেতে পারে। এখন টেকনোলজি অনেক উন্নত। সেটা সামনে রাখা যেতে পারে। এর বাইরে সবগুলো ভেঙে অত্যন্ত আধুনিক, উন্নত এবং যুগোপযোগী হাসপাতাল করতে হবে। আমি জানি, একটা কিছু করতে গেলেই একদল লাফ দিয়ে বলবে হেরিটেজ। জীবন বড়, না হেরিটেজ বড়? জীবনটা আগে বড়। চিকিৎসা বড়, না হেরিটেজ বড়? ভবন ধসে কেউ যদি মারা যায়, তাহলে তো হেরিটেজওয়ালার দোষ হবে না। দোষ হবে সরকারের। এটা হলো বাস্তবতা। এই যে আমি বললাম, দেখবেন টক শো শুরু হয়ে যাবে। পত্রিকায় লেখালেখি হবে। মানুষের জন্য যেটা কল্যাণকর, সেটা আমি করবই। ওই লেখালেখি করে বেশি কিছু করা যাবে না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, পিছিয়ে নেই। সব থেকে সুখবর আমাদের যে টার্গেট প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে নিয়ে যাব, সেটায় সফল হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, তারপরেও মুদ্রাস্ফীতি কম। অর্থনীতির ভিত্তি এখন মজবুত। মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। সবাই ভাবছে, আমরা বৃদ্ধই হই না। জানা গেছে, মোট ১ দশমিক ৭৬ একর জমিতে বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালটি সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত হবে। ইনস্টিটিউটটি নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৪ কোটি টাকা। খুব শিগগিরই আন্ডারগ্রাউন্ডে দুই তলা বেইজমেন্টসহ মোট ১২তলা বিশিষ্ট বহুতল একাধিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হবে। পৃথক তিনটি ব্লকের একটিতে বার্ন, একটিতে প্লাস্টিক ও অপরটিতে একাডেমিক ভবন থাকবে বলেও জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর