বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোনো সুখবর নেই শেয়ারবাজারে

আলী রিয়াজ

প্রায় প্রতিদিনই দরপতন হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজারে। মুনাফা দূরে থাকুক নিজের বিনিয়োগের টাকা ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। আস্থাহীন বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর না থাকায় তারা উদ্বিগ্ন। স্বস্তিতে নেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও। অস্থিরতা চলছে ইনিশিয়াল পাবলিক অফারে (আইপিও)। শেয়ারবাজার নিয়ে এতসবের পরেও ভুঁইফোড় কোম্পানির আইপিও আসছে। এসব কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন। এক মাস ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ২৮৮টি কোম্পানির প্রায় সবগুলোরই শেয়ার দর কমেছে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে এই সময় শেয়ারবাজার মূলধন হারিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে হলে বৃহৎ মূলধনী কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া বাজার শক্তিশালী হবে  না। বাজার মনিটরিংয়ে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে শেয়ারবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। জানুয়ারি মাসে শেয়ারবাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও ফেব্রুয়ারি থেকে তা নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হয়। বছরের তৃতীয় মাস মার্চে বাজার পুরোপুরি অস্থিরতা বিরাজ করে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ার দর গত এক মাসে কমেছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। বাজার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে সূচক কমেছে প্রায় দুইশ পয়েন্ট। এই সময় সব কোম্পানির শেয়ার দর কমায় বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক মাস আগেও যেখানে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ গতকাল তা তিন লাখ ৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি বা তার নিচে রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়েনি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ার ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। ৪০টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০টির দর অভিহিত মূল্যের নিচে। এমনকি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকায়। ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে আটটির শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের নিচে। এমনকি বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর গত এক বছরে এক টাকাও বাড়েনি। এমন শতাধিক কোম্পানি। এর পরেও বাজার স্থিতিশীল বা শক্তিশালী করার কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ বাজার সংশ্লিষ্টদের। এমনকি গত তিন মাসে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানির আইপিও নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। চলতি বছর শেয়ারবাজারে আইপিও এসেছে চারটি। এই চার প্রতিষ্ঠানের আইপিও নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা নানা প্রশ্ন তুলেছেন। এর মধ্যে একমি ল্যাবরেটরিজ, ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, ড্রাগন সোয়েটারের আইপিও অনুমোদন নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। জালিয়াতির জন্য ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের কয়েক মাস আইপিও স্থগিত ছিল।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যে ধরনের কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয় সবগুলোর শেয়ার নিয়েই কারসাজি হয়। ছোট মূলধনী কোম্পানি দিয়ে কখনো শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে না। বাজারে এখন এমন কতগুলো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে যেগুলোর শেয়ার নিয়ে বাজার সিন্ডিকেটের খেলায় পরিণত হয়েছে। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে উদ্যোগ নেই। বড় বড় টেলিকম কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে হলেও বাজারে আনতে হবে। নইলে বাজার সিন্ডিকেট থেকে শেয়ারবাজার মুক্ত হবে না। এমন চলতে থাকলে শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তো হবেই বিনিয়োগকারীরা।

সর্বশেষ খবর