সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ব্যক্তিকরমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ নির্ধারণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দেশের সব ব্যক্তিশ্রেণি বা সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ বা সাড়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যক্তি-আয়করের সর্বোচ্চ হার কমানোর প্রস্তাব দিয়ে ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, বর্তমানে ব্যক্তি-করদাতাদের জন্য আয়করের সর্বোচ্চ হার ৩০ শতাংশ। এটি কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হলে করদাতারা সত্যিকারের আয় প্রকাশে উৎসাহিত হবেন। করফাঁকিও কমবে।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব  ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট ২০১৬-১৭ আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ দাবি জানিয়েছে দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) ও ভারী শিল্প-মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) নেতারা। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তব্য দেন এনবিআর সদস্য ভ্যাটনীতি ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ, সহ-সভাপতি খ. আতিক-ই-রাব্বানী, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, এমসিসিআইর মহাসচিব ফারুক আহমেদ, কমিটির সদস্য আবেদ এইচ খান ও হাবিবউল্লাহ এন করিম, বিসিআইর সহ-সভাপতি শামসুর রহমান, পরিচালক প্রবীর কুমার সরকার, প্রীতি চক্রবর্তী আবুল কালাম ভূঁইয়া, সাবেরা আহমেদ কলি প্রমুখ। প্রাক-বাজেট আলোচনায় বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতাদের সোচ্চার হওয়ার প্রতিক্রিয়ার জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীরা জাতীয় শত্রু। তাদের চিহ্নিত করা আমাদের সবার জাতীয় দায়িত্ব।’ নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে এমসিসিআইর আশঙ্কা প্রকাশের জবাবে তিনি বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইনে কোনো অসুবিধা হলে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব।’ এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জরিপ করে সারা দেশে ৮০ লাখ স্বচ্ছ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। নতুন বাজেটে এই ৮০ লাখ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানকে করজালের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করে উপযুক্ত রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। সে জন্য এবার পুরো বৈশাখ মাসে রাজস্ব প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হালখাতা করে বকেয়া আদায়ের জন্য।’ এমসিসিআই মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’ এর জবাবে এনবিআর সদস্য ভ্যাটনীতি ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে কোনো শঙ্কা থাকবে না। এর আগে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, ‘এনবিআর করদাতাদের সম্মানার্থে যে ট্যাক্সকার্ড প্রদান শুরু করেছে, এর আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি এই ট্যাক্সকার্ডকে স্মার্টকার্ডে রূপান্তর করা হোক। আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হোক। এ ছাড়া করপোরেট করহার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হোক। আবাসান খাতে বিদ্যমান মন্দা উত্তরণে রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি প্রত্যাহার করে ট্রান্সফার ফি প্রবর্তন এবং ভ্যাট ১ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হোক।’ এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ‘আমরা কর প্রশাসন নিয়ে প্রতিবছর কথা বলি। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) থেকে যেসব করদাতাকে দেখভাল করার কথা, তাদেরও মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন সার্কেল থেকে চিঠিপত্র দেওয়া হচ্ছে।’ বিষয়টি এনবিআরকে খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন তিনি। এমসিসিআই কমিটির সদস্য আবেদ এইচ খান বলেন, পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও মূলধনী আয়ের ওপর আয়কর নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের মেয়াদকাল দুই বছর বা এর বেশি হলে ৫ শতাংশ, এক থেকে দুই বছর হলে ১০ শতাংশ এবং এক বছরের নিচে হলে ১৫ শতাংশ করহার প্রচলন করা যেতে পারে। এতে সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়বে, তেমনি বাজারও স্থিতিশীল হবে। বিসিআইর পরিচালক প্রবীর কুমার সরকার বলেন, পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন খাতে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হোক। পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হোক। সাবেরা আহমেদ কলি বলেন, তৃণমূলের নারী উদ্যোক্তাদের করহার কমানো হলে তারা উৎসাহিত হবেন। এদিকে বাজেট প্রস্তাবে এমসিসিআই বলেছে, আগামী অর্থবছরে সাধারণ ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ, মহিলা ও ৬৫ বছর ঊর্ধ্বের করদাতাদের ৩ লাখ ৫০ হাজার, প্রতিবন্ধীদের ৪ লাখ, মুক্তিযোদ্ধাদের ৪ লাখ ৫০ হাজার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হোক। আরেক বাণিজ্য সংগঠন বিসিআই ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। শিল্পমালিকদের এই সংগঠনটি বাজেট প্রস্তাবে আরও বলেছে, আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা থাকলে তা শুধু শিল্প খাতে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকা উচিত। দেশের শিল্পাঞ্চল ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের উন্নয়ন এবং এর কার্যক্রমের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রয়োজন, যা শিল্পায়ন তথা সামগ্রিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্যাকেজ পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। বিসিআই তাদের বাজেট প্রস্তাবে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেছে, বন্ড সুবিধা প্রদান ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং কঠোর তদারকি ও নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। আন্ডার ইনভয়েস ও মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্য আমদানি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। নিয়মিতভাবে পণ্যমূল্যের খাতভিত্তিক ডাটা আহরণ এবং সব বন্দরে স্ক্যানার ও স্বয়ংক্রিয় পরিমাপক স্থাপনের প্রস্তাব করে বিসিআই।

সর্বশেষ খবর