শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

ঐতিহাসিক নিদর্শন সুতানাল দীঘি

সাইফুল ইসলাম, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)

ঐতিহাসিক নিদর্শন সুতানাল দীঘি

তিন নামে সুতানাল দীঘির নাম। সুতানাল, কমলা রানী ও বিরহিনী। তবে এলাকায় সুতানাল পুকুর নামে এটি পরিচিত। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে মধ্যমকুড়া গ্রামে ৬০ একর জমির ওপর দীঘিটি অবস্থিত। এর দূরত্ব উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার।

দীঘিটি কে কখন কোন উদ্দেশে খনন করেছিলেন- তার ইতিহাসনির্ভর    কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, মোগল আমলের শেষের দিকে এ গ্রামে কোনো এক সামন্ত রাজার বাড়ি ছিল। আবার কেউ বলেন এখানে বৌদ্ধবিহার ছিল। কথিত আছে সামন্ত রাজা রানীকে ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রানী তখন রাজাকে বলেন, ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে আপনি মানুষের জন্য এমন কিছু দান করুন- যা যুগ যুগ ধরে সবাই মনে রাখবে। রাজা তখন সিদ্ধান্ত নেন, অবিরাম এক রাত একদিন সুতা কাটা হবে। যে পরিমাণ সুতা হবে- সেই সুতার সমপরিমাণ লম্বা এবং প্রশস্ত একটি দীঘি খনন করা হবে। এলাকার মানুষ সেই দীঘির জল ব্যবহার করবে। এরপর শুরু হয় দীঘি খননের কাজ। তৈরি হয় বিশাল এক দীঘি। এই দীঘির এক পাড়ে দাঁড়ালে অন্য পাড়ের লোক চেনা যায় না। কথিত আছে, খননের পর দীঘিতে জল ওঠেনি। জল না ওঠায় সবাই যখন চিন্তিত। তখন কমলা রানী স্বপ্নাদেশ পেলেন- ‘গঙ্গাপূজা কর নরবলি দিয়া, তবেই উঠিবে দীঘি জলেতে ভরিয়া।’ এমন স্বপ্ন দেখে রানী চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন তিনি নরবলি না দিয়ে নিজেই গঙ্গামাতাকে প্রণতি জানানোর জন্য মহা-ধুমধামে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দীঘির মাঝখানে গঙ্গাপূজার আয়োজন করেন। কমলা রানী গঙ্গামাতার পায়ে প্রার্থনা জানিয়ে বলেন, ‘কোন মায়ের বুক করিয়া খালি, তোমাকে দিব মাতা নরবলি। আমি যে সন্তানের মা, আশায় করিয়া ক্ষমা কোলে তুলিয়া নাও। মা পূর্ণ করো তোমার পূজা।’ এরপর বজ পাতের শব্দে দীঘিতে খুব দ্রুত জল ওঠা শুরু হয়। লোকজন দৌড়ে পাড়ে উঠতে পারলেও দীঘির টইটম্বুর জলে রানী তলিয়ে যান। কমলা রানী আর তীরে উঠতে পারেননি। সেই থেকে কমলা রানী বা সুতানাল দীঘি নামে এটি পরিচিতি পায়।

এই দীঘিকে কেন্দ্র করে এখন প্রতি বছর সৌখিন মত্স্য শিকারিদের মিলনমেলা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে মত্স্য শিকারি ও উত্সুক মানুষের আনাগোনায় এলাকার পরিবেশ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।

এ দীঘির মাছ খুব সুস্বাদু।

১৯৮৩ সালে এই দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ‘সুতানালি দীঘিরপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি’। বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১৮ জন। সব সদস্যই দীঘির পাড়ে বসবাস করেন। ঐতিহাসিক এ দীঘিকে কেন্দ্র করে ভূমিহীনদের কর্মসংস্থান করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর