শিরোনাম
রবিবার, ১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
হঠাৎ বেড়েছে খুনোখুনি

লক্ষ্মীপুরে কেন এত খুন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরে কেন এত খুন

লক্ষ্মীপুরে কেন এত খুন হচ্ছে এমন কথা এখন জেলাবাসীর মুখে মুখে। জেলাব্যাপী বাড়ছে যৌন হয়রানিসহ ধর্ষণের ঘটনাও। খুনিদের আরও টার্গেটে আছে জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। এ নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতারা উদ্বিগ্ন। তাদের মতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, পারিবারিক কলহ, জমি সংক্রান্ত বিরোধ, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী বাহিনীর আধিপত্য বিস্তার, দলীয় কোন্দলের পরিণামে খুনসহ এসব অপরাধ ঘটছে। পুলিশ ও স্থানীয় তথ্য মতে, গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সাতজন খুন হন, আহত হন শতাধিক লোক, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন নারী ও ছাত্রী। বিশিষ্টজনরা মনে করেন, এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় দিন দিন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। সূত্রে জানা যায়, রাজিবপুরে গত ২৮ এপ্রিল মধ্য রাতে বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে ইসমাইল হোসেন মানিক ও কামরুল ইসলাম নামের দুই আওয়ামী লীগ কর্মীকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। নিহত মানিকের ভাই মোরশেদ আলম বাদী হয়ে সদর থানায় এ মামলা করেন।

এ ঘটনায় মামলার এজাহারে নাম থাকা আসামি বেল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করলেও অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মাদক, পূর্ব শত্রুতা, সন্ত্রাসী বাহিনীসহ তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

এ দিকে এ হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে আসন্ন পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে একটি বিশেষ মহল বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু। এতে করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

আরও খুনের ঘটনা : শনিবার ৩০ এপ্রিল পৌর শহরের লামচরী এলাকায় জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতন করে হত্যা করার অভিযোগ করেন পরিবার।

এর আগে শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) ভোর রাতে জেলার রায়পুরে পারিবারিক কলহের জের ধরে একই পরিবারের পাঁচজনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় একজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিনজনসহ মোট চারজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত জামাই নাজমুল হোসেনকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

একই উপজেলার দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামে ২৭ এপ্রিল সকালে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় মো. আরিফ হোসেন নামে এক নৈশপ্রহরী নিহত হন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মিথুনকে আটক করা হয়। গত ২৩ এপ্রিল ইউপি নির্বাচনে রামগঞ্জের ভোট কেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের গুলিতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলা হলেও পরবর্তী কার্যক্রমে অগ্রগতি নেই পুলিশের। ১৮ এপ্রিল কমলনগরে ফলকনকাচিয়ার খাল মাছঘাট এলাকা থেকে মাছ ধরার ট্রলার থেকে কবির হোসেন নামে এক জেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেননি। ৩ এপ্রিল দিনগত রাতে চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর গ্রামে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতিসহ মোট ছয় মামলার আসামি আবু কাউসার নিহত হন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের একজন উপপরিদর্শকসহ দুই কনস্টেবলও আহত হন বলে জানায় পুলিশ। ৫ এপ্রিল সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম চর উভূতি গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলা ও দুই সহোদর বোনকে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। ৬ এপ্রিল জেলার কমলনগরের চর লরেন্সে ডাকাতের গুলিতে আবদুল ওয়াদুদ জমাদ্দার নামে এক গৃহকর্তা নিহত হন। এ সময় ডাকাতদের হামলায় দুজন গুলিবিদ্ধসহ দুই পরিবারের চারজন আহত হন।

এ দিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একাধিক নারী ধর্ষণের ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে সূত্রে জানা যায়। সম্প্রতি সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের নবীগঞ্জ ও বেড়ির পাশে ডাকাতিকালে ধর্ষণের শিকার হন একাধিক নারী। কিন্তু সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলছেন না বলে একাধিক গ্রামবাসী জানান। এ ছাড়া ২৯ মার্চ রাতে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামগঞ্জ বাজারের পাশে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে দুই বোন গণধর্ষণের শিকার হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তিনিসহ সন্ত্রাসীদের টার্গেটে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরও তিন নেতা। যে কোনো মুহূর্তে তাকেসহ ওই নেতাদের হত্যা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ জনপ্রতিনিধি। জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল বাশার জানান, বর্তমানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা ঢিলেঢালা হয়ে গেছে, আমাদের সচেতনতার অভাবে রাজনৈতিক নেতারা তাদের দায়িত্ববোধ থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন, এতে দুষ্ট লোকেরা নষ্টামীর সুযোগ পাচ্ছে বেশি, যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তারা মুষ্টিমেয়, এদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) জেলা কমিটির সদস্য গাজী গিয়াস উদ্দিন বলেন, মাদক এখন অনিয়ন্ত্রিত ও ব্যাপক। এ কারণে খুন, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিসহ অন্যান্য অপরাধ বাড়ছে, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে এসব অপরাধকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানান তিনি। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু মাদক, সন্ত্রাস বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, খুনিরা কোনো দলের নয়, যে দলেরই হোক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান জানান, বর্তমানে আইনের শাসন না থাকায়, শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে মানুষ নিজেরা খুন-খারাবিতে লিপ্ত হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর