বুধবার, ৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিদ্রোহীদের চাপে নৌকার মাঝিরা

রফিকুল ইসলাম রনি

বিদ্রোহীদের চাপে নৌকার মাঝিরা

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট গ্রহণের প্রথম পর্ব থেকেই দলের বিদ্রোহীদের নিয়ে অস্বস্তিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অনেক ইউপিতে নৌকার মাঝিরা (প্রার্থী) ধরাশায়ী হয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে। এদিকে দলের মনোনয়ন না পেয়ে পরে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন যারা তাদের বহিষ্কার করেও দমানো যাচ্ছে না। অধিকাংশ ইউপিতেই আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহীরা। আগামী ৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৭২৫ ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে প্রায় দুই শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত ইউপিতে দলের বিদ্রোহীরাই নৌকার শক্ত প্রতিপক্ষ। বিএনপি কিংবা অন্য কোনো দল নয়, প্রচার-প্রচারণায় দলীয় বিদ্রোহীদের কাছে নৌকার প্রার্থীরা দাঁড়াতেই পারছেন না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, জেলার শীর্ষ নেতাদের অসহযোগিতা, বিদ্রোহীদের প্রকাশ্যে মদদ ও প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় তারা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বলছেন, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা না থাকা, উড়ে এসে জুড়ে বসা লোকেরা টাকার বিনিময়ে দলীয় নমিনেশন পাওয়ায় তারা প্রচারণায় অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।

৭ মে অনুষ্ঠেয় চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শাহে আলম শিকদার। আওয়ামী লীগের নমিনেশন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের কর্মী-সমর্থকদের কারণে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ সরকারদলীয় প্রার্থীর। শাহে আলম তালুকদার বলেন, সুমনের লোকজন সশস্ত্র মহড়া, ভোটারদের ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করে আসছে। তারা এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অজানা কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করছে না। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, সরকার দলের প্রার্থীই অন্য এলাকা থেকে লোক ভাড়া করে   প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বলে বেড়াচ্ছেন-ভোট না দিলেও সে চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, নৌকার প্রার্থীর দুই ভাই প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা। আমি কি তাকে বাধা সৃষ্টি করতে পারি? তিনি বলেন, কমপ্লেইন করার কথা আমার। কিন্তু করি না, কারণ করে লাভ হবে না। কুড়িগ্রাম জেলা সদরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে তৃণমূলের বাছাই উপেক্ষা করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী কৌশলে তার ছেলে রেদওয়ানুল হক দুলালের নাম কেন্দ্রে পাঠান। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ পড়লে তদন্ত করে এর সত্যতা পায়। পরে তৃণমূলের বাছাইকৃত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুকে চূড়ান্ত করা হয়। এলাকার একক আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ নিজের কব্জায় রাখতে তাই জেলা সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী ও তার ছেলে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রেদওয়ানুল হক দুলাল স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নৌকার বিপক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ অভিযোগ করে আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে অবহিত করেছেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরোধিতা, সাধারণ ভোটারদের নৌকা মার্কা ভোট না দেওয়ার হুমকি ও নৌকার পক্ষের প্রচারণাকারীদের হামলা-মামলার ভয়ে নৌকার জয় নিয়ে শঙ্কিত বলে অভিযোগ করেন নৌকার এ প্রার্থী। এ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ডাক্তার। এ ব্যাপারে জাফর আলীকে তার মোবাইল ফোনে সাতবার ও তার ছেলে রেদওয়ানুল হক দুলালের ফোনে ১১ বার ফোন ও এসএম করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, আমি কোনো পক্ষের প্রচারণায় নেই। মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ লুত্ফর রহমান চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য পঞ্চসারে গোলাম মোস্তফা ও বেতকায় মো. আলম শিকদার ওরফে বাচ্চু শিকদারের নাম কেন্দ্রে পাঠান। দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মোস্তফা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু কেন্দ্র তা পরিবর্তন করে পঞ্চসারে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুস সাত্তার খান, বেতকায় টঙ্গিবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. শওকত আলী খানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজ নিজ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আলম শিকদার ও গোলাম মোস্তফা। এদের পক্ষে সরাসরি সমর্থন রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের। প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব, জেলা যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ও জালাল উদ্দিন, পঞ্চসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনসহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা। ফলে নৌকার প্রার্থী এখানে দাঁড়াতেই পারছেন না। গতকাল বিকালে কয়েক দফা পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে রামপাল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বাচ্চু শেখ ওরফে সিটি বাচ্চুর লোকজনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ও হুমকি-ধমকির ফলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোশারফ হোসেন মোল্লা। নৌকার পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা, সমর্থকদের মারধর করে গ্রাম ছাড়া করার হুমকিসহ নানান অভিযোগ এনে নৌকার প্রার্থী মোশারফ হোসেন মোল্লা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছেও তেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। নেত্রকোনার বারহাট্টায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ঠিকমতো প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইদুর রহমান। বিদ্রোহী প্রার্থী আমিরুল ইসলামের সমর্থকদের নৌকার প্রার্থীকে প্রচারণা বাধা সৃষ্টি করছেন বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর