বুধবার, ৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

৩০ নৌরুট ও বন্দরের অপমৃত্যু

এস এ আসাদ, পাবনা

৩০ নৌরুট ও বন্দরের অপমৃত্যু

দখল-দূষণে মাত্র আড়াই যুগে পাবনার ১৫টি নৌপথ ও ১৫টি নৌবন্দরের মৃত্যু ঘটেছে। দখলমুক্ত করে নদ-নদীগুলো পুনঃখনন করলেই এসব পথ ও বন্দর আবার চালু করা যায়। কিন্তু প্রশাসন এ ক্ষেত্রে নজর দিচ্ছে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। পাবনা জেলার পুবে রয়েছে যমুনা। দক্ষিণ-পশ্চিমে পদ্মা আর উত্তরে বড়াল নদ। শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। এ ছাড়াও জেলার বুক চিরে জালের মতো বিস্তার করে আছে গারুলিয়া, চিকনাই, আত্রাই, চন্দ্রাবতী, গুমানী, সুতিখাল, কাগেশ্বরী, রুকনাই, আত্রাইশুক্লা, হুড়াসাগর, ট্যাপাগাড়ি, শালিকাসহ বিভিন্ন শাখা নদ-নদী ও খাল। স্বাধীনতার পরও এসব নদ-নদীতে পানির প্রবাহ ছিল স্বাভাবিক। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি ও অর্থনীতি চলত নৌপথকে ভিত্তি করেই। কিন্তু ক্রমে দখল-দূষণ, ক্রসবাঁধ ও নানান অবহেলায় নদ-নদীগুলোর বেশির ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। যেটুকু বর্তমান আছে তাও হারিয়ে যাচ্ছে দখলবাজদের কবলে পড়ে। খোদ জেলা প্রশাসনের তথ্যেই দেখা যায়, একে একে বাজিতপুর, পাকশী, ঈশ্বরদীর সাড়া; বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী, কাজিরহাট, ভারেঙ্গা, নাকালিয়া; ভাঙ্গুরার বড়াল ব্রিজ ঘাট; চাটমোহরের নূরনগর ঘাট, বোথর ঘাট, পুরনো বাজার ঘাটসহ ১৭টি নৌবন্দর ও ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড—পাউবো সূত্র বলছে, পাবনার ৪০৮ কিলোমিটার নৌপথে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নৌযান চলাচল করত। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ কিলোমিটারে ১৫টি নৌপথ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আংশিকভাবে চালু আছে পদ্মা ও যমুনার কিছু পথ। এ নৌপথও শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। তখন নৌযান চলাচলও ব্যাহত হয়। বিআইডব্লিউটিএ’র বাঘাবাড়ী পোর্ট কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু জানান, শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকটের কারণে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে মালামাল আনা-নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। নদী ড্রেজিং করা জরুরি। কিন্তু বার বার ড্রেজারের জন্য তাগাদা দিয়েও ফল পাওয়া যায় না। তাই ড্রেজিং সংকটে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

‘ইছামতী নদী বাঁচাও আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক ফারুক হোসেন চৌধুরী জানান, ২০০৭ সালে ইছামতীর দুই পাশে ২৮৫ জন অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করা হলেও প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে তাদের উচ্ছেদ করতে পারেনি। ফলে দখলবাজির আরও বিস্তার ঘটেছে। এ নদী ড্রেজিং না করার কারণে বর্তমানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক বিভূতিভূষণ সরকার বলেন, নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ায় বিকল্প সেচব্যবস্থা করতে হয়েছে। এতে শুধু সেচ খরচই বেড়েছে ১৫-২০ শতাংশ। এ ছাড়া নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মত্স্য কর্মকর্তা আবদুল জলিল মিয়া বলেন, নদ-নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ায় দেশি মাছের উত্পাদন কমে যাচ্ছে। ১৯৮২ সালে চলনবিল থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৩৬ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন মাছ। এখন এ বিল থেকে পাওয়া যাচ্ছে বছরে মাত্র ৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ। পাউবো পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম দাবি করেন, বর্তমান সরকার নদ-নদীর নাব্য ফেরাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে বড়াল নদকে সচল করতে বিভিন্ন ক্রসবাঁধ ও জলকপাট অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে অন্য নদ-নদীগুলোও সচলের ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেন, নদ-নদীগুলো দখলমুক্ত করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ইছামতীকে সচল করতে পারলেও শহরের চেহারায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। সব নদ-নদী সচলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর