বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

এসএসসিতে প্রাণের উচ্ছ্বাস

পাসের হার ৮৮.২৯%

নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসিতে প্রাণের উচ্ছ্বাস

ভালো ফলাফলের পর রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীদের উল্লাস —জয়ীতা রায়

এসএসসি ও সমমান ২০১৬ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে মোট ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন ছাত্রছাত্রী পাস করেছে। পাসের গড় হার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন। ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে যান এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্ষেত্রে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,  কোনোভাবেই পরীক্ষায় ফেল করার মানে হয় না। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের উন্নয়ন, ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, বৃত্তি প্রদান এবং প্রতি বছর মাধ্যমিক পর্যন্ত সারা দেশে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এরপর দুপুর ১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সামনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বছর বোর্ডগুলোর অধীনে মোট ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্যে পাস করে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন। গত বছর পাস করেছিল ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৭ জন বেশি পাস করেছে।

সারা দেশে ৩ হাজার ২১৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৮ হাজার ১০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত বছরের চেয়ে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এ বছর বেড়েছে ২৯১টি। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ১৩ লাখ ২৮৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৩ জন। বোর্ডগুলোতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৪ লাখ ১২ হাজার ১০১ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর বোর্ডে এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ৮৪ শতাংশ, ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ৯০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ৭৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, ৮৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও ৮৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩১৪ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৮৯৫ জন। গত বছর ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬২২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৬ জন। পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ২ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৯৮ হাজার ৫৮১ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে পাস করেছে ৮১ হাজার ৯২৮ জন। এ বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৭ হাজার ৯৭ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ১১ শতাংশ। গত বছরে ১ লাখ ১০ হাজার ২৮৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৯১ হাজার ৪৫৭ জন পাস করেছিল। ২০১৬ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি পাস করেছে। বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের পাসের হার যথাক্রমে ৮৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও ৮৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

দেশের বাইরে ৮টি কেন্দ্র থেকে মোট ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে পাস করেছে ৩৫৩ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১২ জন। পাস করতে পারেনি ৪২ শিক্ষার্থী। ঢাকায় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এ বছর ৬১০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৬৪ জন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসএসসি পরীক্ষায় ১ হাজার ৩৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ হাজার ৩৬০ জন। ১ হাজার ২৪৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোট এক হাজার ৬২৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ৬২২ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৪২০ জন। মাইলস্টোন কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ বছর কলেজটি থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ১ হাজার ৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬০৩ জন।

ক্যাডেট কলেজ ৯৯ শতাংশ জিপিএ-৫ : দেশে ১২টি ক্যাডেট কলেজে শতভাগ পাসের পাশাপাশি ৯৯ দশমকি ১৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ১২টি ক্যাডেট কলেজ থেকে মোট ৬১৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬১০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

৫৩ প্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল : এ বছর দেশের ৫৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল করেছে। শতভাগ ফেল করা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গতকাল ফল ঘোষণার সময় তিনি বলেন, কেন সব শিক্ষার্থী ফেল করল তা বিশ্লেষণ করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। গত বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী ফেল করেছিল। এ বছর ২৩টি বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে। এমন পরিক্ষার্থীদের জন্য ২০ মিনিট অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল পরীক্ষায়। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক এবং ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত) পরীক্ষার্থীদের জন্য ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ রাখা ছিল। অভিভাবক বা সাহায্যকারীদের নিয়ে এমন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটের (www.educationboardresults.gov.bd) মাধ্যমে জানা যাবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

ফল পুনঃনিরীক্ষণ : আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১৮ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এ জন্য সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে মেসেজ পাঠাতে হবে। আবেদন করতে মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC লিখে স্পেস দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর দিয়ে স্পেস দিয়ে প্রার্থীর রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে সাবজেক্ট কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজে একটি পিন নম্বর প্রদান করা হবে। আরেক মেসেজের মাধ্যমে RSC লিখে স্পেস দিয়ে YES লিখে প্রাপ্ত পিন নম্বর দিয়ে স্পেস দিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে মেসেজ পাঠাতে হবে। পুনঃনিরীক্ষণের জন্য প্রতিটি বিষয় বা প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা ফি দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর