বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাগীব আলীর সাম্রাজ্যে পতন

আতঙ্কে ৩৫৭ পরিবার দুশ্চিন্তায় মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

রাগীব আলীর সাম্রাজ্যে পতন

শিল্পপতি রাগীব আলীর দখলে থাকা সিলেটের তারাপুর চা বাগানটি ২৬ বছর পর ‘মুক্ত’ হওয়ায় ৩৫৭টি পরিবার এখন আতঙ্কগ্রস্ত। তারা রাগীব সাম্রাজ্যে প্লট কিনেছিল। পরের জমি যে নিজের বলে বেচা হয়েছে তা তারা বুঝতে পারেনি। রাগীব ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চা বাগানসহ প্রায় ৪২৩ একর দেবোত্তর সম্পত্তি তার ছেলে আবদুল হাইয়ের নামে ইজারা নিয়েছিলেন। ওই জায়গায় গড়ে তুলেছিলেন সাম্রাজ্য। নিজের ও স্ত্রীর নামে গড়ে তুলেন মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বিক্রি করেন ৩৫৭টি প্লট। রাগীব সাম্রাজ্যের পতনের পর সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এই প্লট গ্রহীতারা। এ ছাড়া আতঙ্কে রয়েছেন মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও।

জানা যায়, ১৮৯২ সালের ১০ জুন ব্রিটিশ মালিকানাধীন তারাপুর চা বাগানটি কিনে নেন বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত। ১৯১৫ সালে তিনি ওই বাগানটি শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবতার নামে লিখে দেন। এরপর থেকে ওই সম্পত্তিটি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। ১৯৯০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে দেবোত্তর সম্পত্তিটি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেন রাগীব। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি একটি উপকমিটি গঠন করে তারাপুরের দেবোত্তর সম্পত্তি ইজারার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনে জালিয়াতির মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি ইজারা নেওয়ার ঘটনা প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে দেবোত্তর সম্পত্তির অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে চা বাগান পুনরুদ্ধারের সুপারিশ করা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাগীব আলী গংদের বিরুদ্ধে সিলেট সদরের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল হাই আদালতে মামলা করেন রাগীব আলী, তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও জামাতার বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই উচ্চ আদালতে রিট করলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। গত ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তারাপুর চা বাগানে নির্মিত সব অবকাঠামো ছয় মাসের মধ্যে অপসারণ করে চা বাগান সৃজন এবং প্রকৃত সেবায়েতের কাছে বাগানটি হস্তান্তরের আদেশ দেয়। এ ছাড়া স্থগিত হওয়া দুটি মামলা পুনরায় সক্রিয় করারও নিদের্শনা দেন বিচারকরা। আপিল বিভাগের ওই আদেশের পরিপ্র্রেক্ষিতে গত রবিবার জেলা প্রশাসন রাগীব আলীর কাছ থেকে তারাপুর বাগান উদ্ধার করে দেবোত্তর সম্পত্তির প্রকৃত সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয়। এ ছাড়া দেবোত্তর সম্পত্তিতে নির্মিত মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালসহ সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে, চা বাগানটি দখলমুক্ত হওয়ার পর আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে ওই জায়গায় স্থাপিত মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের। তাদের আশঙ্কা মেডিকেল কলেজটি বন্ধ হয়ে গেলে বা স্থানান্তরের নামে সময়ক্ষেপণ করা হলে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হবে। শিক্ষার্থী ছাড়াও আতঙ্কে আছেন রাগীব আলীর কাছ থেকে কিনে নেওয়া ৩৫৭ প্লটের মালিকরা। তারা ইতিমধ্যে দেবোত্তর সম্পত্তিতে বাসা-বাড়ি, দোকানপাট ও বিপণিবিতান নির্মাণ করেছেন। অনেকে কোটি টাকা ব্যয় করে বহুতল ভবনও নির্মাণ করেছেন। ছয় মাসের মধ্যে ওই স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মীর মো. মাহমুদুর রহমান। তিনি জানান, উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থাপনাগুলো সরিয়ে না নিলে সিটি করপোরেশন ও পুলিশের সহযোগিতায় তা উচ্ছেদ করা হবে। উচ্ছেদের খরচও দখলদাররা বহন করতে হবে। তারাপুর দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত জানান, ‘দীর্ঘ ২৬ বছর পর দেবোত্তর সম্পত্তিটি দখলমুক্ত হওয়ায় বাগানের শ্রমিক ও সিলেটের মানুষ খুশি হয়েছেন। বাগানের দখল আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো কাগজপত্র পাইনি। দু-এক দিনের মধ্যে কাগজপত্র পেয়ে যাব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর