শনিবার, ২১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

আসলাম ইস্যুতে ‘টুঁশব্দ’ও নেই চট্টগ্রাম বিএনপিতে

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কানেকশনে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর গ্রেফতার ইস্যুতে নীরব চট্টগ্রাম বিএনপি। আসলাম গ্রেফতার হলেও টুঁশব্দ করছেন না মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গ্রেফতারের ছয় দিনেও চট্টগ্রামে কোনো কর্মসূচিই নেই। গ্রেফতারের পরই তার মুক্তি দাবিতে নামে মাত্র যৌথভাবে একটি বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে চট্টগ্রাম বিএনপি। নিজ সংসদীয় জেলা চট্টগ্রাম উত্তরেও বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি নেই। বিগত আন্দোলনে সীতাকুণ্ডে যে তাণ্ডব চলেছিল, তেমন কোনো কিছুই নেই সেখানে। স্পর্শকাতর এ বিষয়ে কোনো কর্মসূচি দিতে নারাজ নেতা-কর্মীরা। তা ছাড়া কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দ্বিধাবিভক্তিও রয়েছে। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের একাধিক নেতা বলেন, ‘সরকার আসলাম চৌধুরীর উত্থানে ঈর্ষান্বিত হয়েই বিভিন্ন গল্প তৈরি করেছে। আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। তবে এ বিষয়টি জনসম্মুখে ব্যাখ্যা করলে বিএনপির অবস্থান শক্ত হতো। উত্তর জেলার রাজনীতিতে তিনি (আসলাম চৌধুরী) একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করলেও গ্রেফতারের বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। তিনি সরকারি ষড়যন্ত্রের শিকার।’

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলাম চৌধুরী যড়যন্ত্রের জালে আটকে গেছেন। চট্টগ্রামের বিএনপিসহ সারা দেশের নেতা-কর্মীরা তার মুক্তি দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশও হয়েছে। শিগগিরই চট্টগ্রামেও কেন্দ্রীয় নির্দেশনামূলক কর্মসূচি পালন করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘দলীয়ভাবে কোনো সভা-সমাবেশ বা কর্মসূচি পালিত হয়নি। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা এলেই তা ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করা হবে এবং সবাই আসলাম চৌধুরীর মুক্তি দাবি করছি।’ এতে কোন্দল বা অন্য কোনো বিষয় নেই বলে জানান তিনি।

উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও চাকসু ভিপি মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে কোনো স্বৈরাচারই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পারেনি। এ সরকারও অবৈধ ক্ষমতা স্থায়ী করতে পারবে না। মিথ্যা মামলা দিয়ে আসলাম চৌধুরীকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে শিগগিরই তাকে মুক্ত করা হবে।’ একই কথা বললেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা হাসান মোহাম্মদ জসিম। সূত্রে জানা যায়, আসলাম চৌধুরী সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হন। এর আগে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাকে উত্তর জেলার সব উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করার দায়িত্ব দেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চলমান ইউপি নির্বাচনেও উত্তর জেলার সাতটি উপজেলায় তার পছন্দের প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দিয়েছে দল। আসলাম চৌধুরীর এমন একচ্ছত্র আধিপত্যে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ ছিল। তারা দলীয় চেয়ারপারসনের কাছেও আসলাম চৌধুরীর ব্যাপারে নালিশ নিয়ে যান। কিন্তু দলীয় নেত্রীর কাছে পাত্তা পায়নি এসব অভিযোগ। এই নেতা আটকের ঘটনায় বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি স্থানীয় বিএনপির মধ্যে। চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির নেতারা একটি বিবৃতি পাঠানোর মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ করেছেন। বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছেন, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কানেকশন অবাস্তব, কল্পনাপ্রসূত ও হাস্যকর। ১৫ মে রাজধানী থেকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে ‘সরকার উত্খাতের বৈঠকের’ অভিযোগে গ্রেফতার হন আসলাম চৌধুরী। সম্প্রতি ভারতে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দা এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

সর্বশেষ খবর