রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন বৃক্ষমানব

চিকিৎসায় দেশের মাইলফলক

আলী আজম

স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন বৃক্ষমানব

বিরল রোগে আক্রান্ত বৃক্ষমানব আবুল বাজনদার ক্রমেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন। ইতিমধ্যে তার দুই হাত, দুই পায়ের বর্ধিত অংশ এবং শরীরের আঁচিল ফেলে দেওয়া হয়েছে। এখন চলছে সৌন্দর্যের কাজ। হাত-পা হালকা হয়ে গেছে।

ঠিকমতো খাবার খাচ্ছেন। ঘুম হচ্ছে। চেহারায় সৌন্দর্যের ছাপ ফিরে এসেছে। আবুল বলছেন, খুব শিগগিরই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিত্সাধীন আবুল বাজনদার বলেন, অস্ত্রোপচার করে তার দুই হাত ও দুই পায়ে গাছের মতো গজিয়ে ওঠা বর্ধিত অংশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। ফেলা হয়েছে শরীরেরসব আঁচিল। খাওয়া-ঘুম ভালো হলেও দুই হাত ও দুই পায়ে ব্যান্ডেজ থাকায় চলাফেরা করতে পারছেন না। তবে শরীর অনেক হালকা হয়েছে। বেশ ভালো লাগছে। আশা করছি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরতে পারব। এখানকার চিকিত্সক ও নার্সরা তার খুব যত্ন নিচ্ছেন। আবুলের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, তার স্বামী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। আবুল গ্রামে ফিরে আবার কাজ করবেন। নিজ হাতে খাবার খাবেন। একমাত্র সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌস তাহিরাকে কোলে নিয়ে আদর করবেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করবেন। আবুলের বাবা মানিক বাজনদার, মা আমেনা বেগমসহ পরিবারের সবাই ভালো আছেন। হাসপাতালের চিকিত্সক ও নার্সদের অনেক সহযোগিতা পাচ্ছেন। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নুরুন্নাহার লতা বলেন, গত ৪ মে আবুলসহ তার বাবা-মায়ের রক্ত, টিস্যু ও মুখের লালা পরীক্ষার জন্য আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টারের চিকিত্সক ডা. মার্টিন কাস্টের নিকট পাঠানো হয়েছে। সেখানে জন্মগত বা পারিবারিকভাবে এ রোগ হয়েছে কিনা তা দেখা হবে। আগামী সপ্তাহে রেজাল্ট পাওয়া যাবে। তবে তার ক্যান্সার ধরা পড়েনি। তিনি আরও বলেন, আবুলের দুই হাত ও দুই পায়ের বর্ধিত অংশ এবং শরীরের আঁচিল ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার মেইন অপারেশন শেষ। এখন সৌন্দর্যের কাজ চলছে। গত ৫ মাসে আবুলের অপারেশন-পরবর্তী কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বরং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত ভালো হয়ে উঠছে। তাকে নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। আবুলকে সুস্থ করে পৃথিবীতে একটা নজির স্থাপন করতে চাই। খুলনার পাইকগাছা থানার সরল গ্রামের আবুল বাজনদার গত ৩০ জানুয়ারি ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন। পরে আবুলের চিকিত্সায় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালামের নেতৃত্বে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় আবুলের ডান হাতের পাঁচটি আঙ্গুলে গাছের মতো গজিয়ে ওঠা বর্ধিত অংশ ফেলে দেওয়া হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ১৯ মার্চ তৃতীয় দফায় আবুলের বাম হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের বর্ধিত অংশ ফেলে দেওয়া হয়। ১৩ এপ্রিল তার বাম হাতে চতুর্থ দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল ৫ম দফায় তার দুই পায়ের বর্ধিত অংশ ফেলে দেওয়া হয়। ৭ মে হাত ও পায়ে ড্রেসিং করা হয়েছে। বর্তমানে তার দুই হাত, দুই পা ও শরীরের সৌন্দর্যের কাজ চলছে। আবুল দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে বলে চিকিত্সকরা আশা করছেন।

চিকিত্সকরা বলছেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিশ্বের চতুর্থ বৃক্ষমানব আবুল বাজনদার সুস্থ হলে চিকিত্সায় সাফল্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য তা হবে একটি মাইলফলক। এ জন্য চিকিত্সায় তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তার চিকিত্সায় গঠিত নয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর