মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ত্রিমুখী সংকটে বিমানের হজ ফ্লাইট

এখনো ভাড়া হয়নি উড়োজাহাজ, দুই দেশের সঙ্গে আলোচনা

মোস্তফা কাজল

ত্রিমুখী সংকটে বিমানের হজ ফ্লাইট

ত্রিমুখী সংকটে চলতি বছরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইটের শিডিউল। এখনো ভাড়া করা যায়নি উড়োজাহাজ। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে সৌদি সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় উড়োজাহাজের শ্লট (বরাদ্দ) প্রাপ্তি। নিয়ম অনুযায়ী হজের ৯০ দিন আগে হজ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া প্রতিটি দেশকে ফ্লাইটের শ্লট দেওয়া হয়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ পালিত হবে। হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমানের হাতে রয়েছে ১৫০ দিন। এ ছাড়া নিয়মিত শিডিউল ঠিক রেখে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করতে গেলে বিমানকে কমপক্ষে দুটি প্রশস্ত আকৃতির উড়োজাহাজ ভাড়া নিতে হবে। এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে  লিখিতভাবে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে হজযাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ার কথা। বাকি আছে মাত্র তিন মাস। অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, বিমানের ইতিহাসে মাত্র তিন মাসে কোনোভাবেই উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বিমানের পরিচালনা পর্ষদ ত্রিমুখী সংকটে পড়েছে। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হজ খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে প্রয়োজনীয় উড়োজাহাজ ভাড়া করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে দুটি দেশের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়েছে।’

এ বছর প্রায় ৫১ হাজার হজযাত্রী পরিবহন করবে বিমান। আর সৌদিয়া এয়ারলাইন্স বহন করবে ৫০ হাজার। বর্তমানে বিমানের বহরে আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনার জন্য ১০টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে মিসর থেকে ভাড়ায় আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এয়ারক্রাফট মাসের ১৫ দিন বিকল থাকছে। উড়োজাহাজ দুটির চারটি ইঞ্জিনের দুটি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি দুটি ইঞ্জিন দিয়ে জাহাজ দুটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামে এর একটির দরজা ভেঙে গেছে। দুটি এয়ারবাস-৩১০-এর মেয়াদ আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে যাবে। মেয়াদ শেষে জাহাজ দুটি বাদ দেওয়া হবে বহর থেকে। এ অবস্থায় হজ চলাকালীন বহরে থাকবে মাত্র আটটি উড়োজাহাজ। কিন্তু এমন পরিস্থিতি জেনেও বিমান কর্তৃপক্ষ এখনো হজের জন্য কোনো উড়োজাহাজ ভাড়া করতে পারেনি। গত এক সপ্তাহে উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে দু-দুবার বৈঠক করেও কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বিমানের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছরও একটি পক্ষ হজের জন্য কোনো উড়োজাহাজ ভাড়া না নিয়ে নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী। হিসাব অনুযায়ী হজের জন্য যদি কোনো উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়া না হয়, তাহলে তিন মাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ৩১৫টি ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হবে। এই সময়ে ১ লাখ ১ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে না। তথ্যমতে, বিমান সপ্তাহে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ১৫২টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিমানের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যাতে হজ চলাকালীন একটি এয়ারবাস-৩১০ বহর থেকে বাদ না দিয়ে রেখে দেওয় যায়। সে জন্য ওই এয়ারবাসটিকে রেশনিং করে চালানো হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী একটি এয়ারবাস প্রতিদিন গড়ে ১৩ ঘণ্টা ব্লক আওয়ার (উড্ডয়ন ঘণ্টা) উড়তে পারে। কিন্তু এখন রেশনিং করে প্রতিদিন মাত্র ৬ ঘণ্টা করে চালানো হচ্ছে, যাতে এয়ারবাসটি হজ শেষ হওয়া পর্ষন্ত বহরে থাকতে পারে। যদিও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বিমানকে জানিয়ে দিয়েছে, রেশনিং করে মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। যদি এয়ারবাস প্রস্তুতকারী কোম্পানি দায়িত্ব নিয়ে লিখিতভাবে আরও দুই মাস পরিচালনার মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেয়, তাহলেই কেবল তারা অনুমতি (এনওসি) দেবে। বিমানের পরিকল্পনা বিভাগ বলছে, যদি একটি এয়ারবাস-৩১০ রেখে দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে হজের জন্য উড়োজাহাজ লিজ না নিলে সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে ১২০ থেকে ১২৫টি ফ্লাইট করা সম্ভব হবে। এতে সপ্তাহে ৩০টি ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে ১১ হাজারের মতো যাত্রী পরিবহন থেকে বঞ্চিত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজ গড়ে ১২.৬৭ ঘণ্টা আকাশে উড়ছে। যদি কোনো উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে গড়ে ১৬.৬৭ ঘণ্টা (ব্লক আওয়ার) আকাশে ওড়াতে হবে বোয়িং-৭৭৭ বিমানকে, যা কোনোভাবেই বিমানের পক্ষে করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ বর্তমানে ১১.৩৩ ঘণ্টা আকাশে উড়ছে। যদি লিজ নেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ওই জাহাজকে ১২.৯৮ ঘণ্টা আকাশে ওড়াতে হবে। এটিও বিমানের পক্ষে সম্ভব হবে না। দুটি ইঞ্জিন না থাকায় এই দুটি উড়োজাহাজ এখনই মাসের অধিকাংশ সময় অচল থাকছে। এ ছাড়া বোয়িং-৭৩৭ বর্তমানে আকাশে উড়ছে ৮.৮২ ঘণ্টা। যদি লিজ না নেওয়া হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে বোয়িং-৭৩৭ দুটিকেও ১১.৯৯ ঘণ্টা ওড়াতে হবে। আর দুটি এয়ারবাসকে বর্তমানে রেশনিং করে গড়ে ৬.৮৮ ঘণ্টা ওড়ানো হচ্ছে। যদি একটি উড়োজাহাজ বহরে থাকে এবং লিজ নেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে এয়ারবাসকে গড়ে ১১.৮৩ ঘণ্টা ওড়াতে হবে।

সর্বশেষ খবর