বুধবার, ২৫ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইমেজ সংকটে ইউজিসি

পরিদর্শনে গিয়ে ঘুষ চাইছেন পরিচালকরা লিখিত অভিযোগ উপাচার্যদের

আকতারুজ্জামান রুনকি

ইমেজ সংকটে ইউজিসি

মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সহকারী পরিচালক আটক হন। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তত্ত্বাবধান করা এ সংস্থার কর্মকর্তাদের কার্যকলাপ নিয়ে তখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিদর্শনে যাওয়া কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ পাওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে ইউজিসি। খোদ ইউজিসি থেকে গিয়ে ঘুষ চাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যরাও বিপাকে পড়েছেন। অনেকে ঘুষ না দিয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির দুই কর্তাব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক কারণেই ইমেজ সংকটে ভুগছেন ইউজিসি কর্মকর্তা ও কর্তাব্যক্তিরা।

ইউজিসি সূত্র মতে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ‘সম্মানীর’ ১০ লাখ টাকার বিষয় উত্থাপন করেন। এ সম্মানীকে ঘুষ আখ্যা দিয়ে ইউজিসির দুই কর্তাব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক ছুটি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিন  কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর জগন্নাথ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একটি সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, প্রত্যেক উপাচার্যই ডিপিপিসহ বিভিন্ন প্রকল্প ও তদন্তের নামে সম্মানী নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। ইউজিসির কর্মকর্তাদের এমন মধ্যবর্তী মূল্যায়নে গিয়ে টাকা দাবি করা অনৈতিক জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, অডিটে গিয়ে অনৈতিকভাবে অর্থ দাবি করা ঠিক নয়। এটি ইউজিসির কাছে কেউ আশা করেন না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘একটি প্রকল্প ইউজিসিতে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু সংস্থাটির এক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মধ্যবর্তী মূল্যায়নের নামে ডিপিপিতে অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা রাখার প্রস্তাব করেন। সমপরিমাণ টাকা আমি না রাখায় তিন মাস ধরে জগন্নাথের ফাইল আটকে রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর কথা জানতে পেরে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি ইউজিসি চেয়ারম্যানকে জানাই। এখন ওই ১০ লাখ ছাড়াই আমার ফাইল পাস হচ্ছে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক অভিযোগ করে বলেন, ইউজিসি থেকে আসা তদন্ত দলগুলোর তদন্তের ওপর ভরসা রাখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এরা কালো টাকায় প্রভাবিত হয়ে যান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অনৈতিকভাবে অর্থ দাবির বিষয়টি চাউর হওয়ার পর সংস্থাটি ইমেজ সংকটে পড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্তে গিয়ে মোটা অঙ্ক উেকাচ গ্রহণের বিষয়গুলো কানাঘুষা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রকদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে একদিকে যেমন ইউজিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি প্রশ্ন উঠছে উচ্চশিক্ষা খাতের কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে। সমপ্রতি ইউজিসির একজন নারী উপ-পরিচালক তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের নামে ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা সম্মানী নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আড়াই মাস আগে একজন নারী কর্মকর্তা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। জানা গেছে, ইউজিসির কর্মকর্তা, পরিচালকদের এমন অনৈতিক অর্থ দাবির অভিযোগে বিব্রত সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানও। রবিবার দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষদের এক মতবিনিময় সভায় ইউজিসির তদন্ত দলকে কোনো অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ইউজিসিকে জানানোর অনুরোধ জানান আবদুল মান্নান। এ ছাড়া গত বছর অক্টোবরে ‘তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ইউজিসি’ শিরোনামে একটি জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির একটি সূত্র জানায়, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপে খোদ ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছে। ইউজিসির সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিব্রতকর কর্মকাণ্ড ও ইমেজ সংকট সম্পর্কে জানতে সচিব ড. মো. খালেদকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, মিডিয়াকে বক্তব্য দিতে চেয়ারম্যানের নিষেধ রয়েছে। চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ দু-একটি ঘটনার কারণে ইউজিসি ইমেজ সংকটে পড়েছে বলে আমি মনে করি না।’ তিনি বলেন, গত এক বছরে ইউজিসির অনেক সফলতা রয়েছে। ইতিবাচক সংবাদগুলো ফলাও করে প্রচার হয়নি বলে দাবি করেন আবদুল মান্নান।

সর্বশেষ খবর