শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিজ্ঞান বই পড়ে আমিই কিছু বুঝি না : জাফর ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) উঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘শিক্ষক, পাঠ্যবই ও পরীক্ষা শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমত আমরা ঠিকমতো শিক্ষক পাচ্ছি না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও না। এরপর পাঠ্যবই। আমি নিজে পড়েও বিজ্ঞানের বই বুঝতে পারি না। পাঠ্যবই এমনভাবে লেখা উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে না হয়।’    

জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘এখন জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য ছেলেমেয়েদের চাপ দেওয়া হয়। গ্রেডিং পদ্ধতির বিন্যাসটাও জরুরি। এমসিকিউ পুরোপুরি তুলে দেওয়া উচিত। ব্যবহারিকেও কোনো পরীক্ষা হয় না। ২৫ নম্বর এমনিতেই দিয়ে দেওয়া হয়।’ গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সভার আয়োজন করে। সভায় দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সবাই এমসিকিউ উঠিয়ে দেওয়া, নোট-গাইড বই বন্ধ, শিক্ষাক্রম সংশোধন করে বইগুলো সহজভাবে তৈরি এবং প্রশ্নব্যাংক তৈরি করে সেখান থেকে পরীক্ষা নেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। শিক্ষাবিদদের মধ্যে অধ্যাপক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বুয়েট অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনজুর আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখও সুপারিশ তুলে ধরেন। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের সঞ্চালনায় সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন বক্তব্য দেন।

শিক্ষাবিদরা সভায় বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে পুরো শিক্ষাব্যবস্থায়ই তাল-গোলের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকরা ঠিকমতো সৃজনশীল বোঝেন না। বেশির ভাগ শিক্ষকই এ পদ্ধতিতে প্রশ্ন করতে পারেন না। ফলে শিক্ষার্থীরাও সৃজনশীল আত্মস্থ করতে পারছে না। এই যে এত পাস করছে তাতে সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থাই সন্দেহের মধ্যে পড়ছে। মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। তারা বলেন, ‘অন্তত জিডিপির ৪ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দের কথা বলেছিলাম। কিন্তু জিডিপির ২.৪ শতাংশ থেকে বরাদ্দ কমে চলতি বাজেটে ১.৮ শতাংশ হয়েছে। মানোন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানোটা খুবই জরুরি।’ সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘শিক্ষায় সংখ্যাগতভাবে আমাদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন গুণগতমান বাড়াতে হবে। এমসিকিউতে ২০১৭ সাল থেকে আরও ১০ নম্বর কমানো হবে। আর শিক্ষাবিদরাই এই সৃজনশীল পদ্ধতি তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিভাবকরা এতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কোচিং ও গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। কিন্তু কিছু শিক্ষক এখন ক্লাসে না পড়িয়ে বাড়িতে পড়ান। আর শিক্ষায় এখন সবচেয়ে বেশি দরকার বিনিয়োগ। তবে বাজেটে এ বিনিয়োগ কমছে। আশা করছি আগামী বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়বে।’    

সর্বশেষ খবর