শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
নিপীড়ন প্রতিরোধ প্রস্তুতি

মার্শাল আর্ট শিখছে কুষ্টিয়ার ছাত্রীরা

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

মার্শাল আর্ট শিখছে কুষ্টিয়ার ছাত্রীরা

ইভ টিজিং, যৌন হয়রানিসহ নানা সামাজিক নিপীড়ন থেকে বাঁচতে মার্শাল আর্ট শিখছে কুষ্টিয়ার গ্রামাঞ্চলের স্কুলছাত্রীরা। পাশাপাশি এসব সামাজিক ব্যাধি রুখতে তারা শ্রেণিকক্ষে বিশেষ পাঠও গ্রহণ করছে। একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইভ টিজিং, যৌন হয়রানি, ধর্ষণসহ পদে পদে নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয় নারীদের। নতুন নতুন আইন বা প্রশাসনের তত্পরতা রুখতে পারছে না এই সামাজিক ব্যাধি। এমন প্রেক্ষাপটে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিজেদের রক্ষায় মাশাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে বিশেষ পাঠ্যপুস্তক পড়ানোর মাধ্যমে ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনসহ নানামুখী সামাজিক নিপীড়ন সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তোলা হচ্ছে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বাড়ছে।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া মিরপুর উপজেলার পাহাড়পুর-লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী বিলকিস বানু জানায়, এ প্রশিক্ষণ নিয়ে তার মনোবল বেড়েছে। আগে স্কুলে যাতায়াতের সময় সে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকত। এখন সেই শঙ্কা বা ভয় আর নেই। একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আরজিনা খাতুন জানায়, ‘আগে নিজেকে খুব দুর্বল মনে হতো। নিজেকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখতাম। তবে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন আমার ভিতরে এক দারুণ আত্মবিশ্বাস জন্মেছে।’ সদর উপজেলার কবুরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা বেগম জানান, তার কয়েকজন সহপাঠী মার্শাল আর্ট শিখছে। এটা দেখে তার মনে জমে থাকা ভয় দূর হয়ে গেছে। সে এখন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। অভিভাবকরাও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। মিরপুর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন শেখ বলেন, ‘আগে মেয়ে স্কুলে গেলে ভয়ে থাকতাম, মেয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরবে তো— এমন আশঙ্কা বুকে বাজত সব সময়। তবে মেয়ে কারাতে শেখায় এখন সেই ভয় অনেকটাই কেটে গেছে।’ পাহাড়পুর-লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিহাদ আলী খান বলেন, ‘এই উদ্যোগ সব স্কুল গ্রহণ করলে নারী নির্যাতন বিশেষ করে স্কুলগামী মেয়েদের ওপর নিপীড়ন বহুলাংশে কমবে। এতে স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতির হারও বাড়বে।’ বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ নামের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ছাত্রীদের এই প্রশিক্ষণ ও পাঠদানে আর্থিক এবং কারিগরি সাহায্য দিচ্ছে।

সংস্থাটির জেলা সমন্বয়কারী হাসান ইকবাল রাসেল বলেন, ‘মেয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে অবাধে ও নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে তাদের যাতে কম বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে না হয় সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর