রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

লটারি শিলংয়ে জুয়ার মহামারী সিলেটে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

জুয়ায় ভাসছে সিলেট নগরী। কোথাও চলছে আইপিএল খেলা ঘিরে জুয়া, আবার কোথাও বসছে ‘ডিজিটাল’ আসর। ভারতের শিলংয়ে ‘তীর কাউন্টার’ নামক অনলাইন লটারিকে কেন্দ্র করে সিলেটে চলছে জুয়া খেলার মহোৎসব। এ লটারি স্থানীয়ভাবে ‘ভারতীয় তীর খেলা’ ও ‘ডিজিটাল লটারি’ হিসেবে পরিচিত। ডিজিটাল এ জুয়ায় মজেছে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। জুয়ার আসরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন বিভিন্ন পাড়ার প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও ছাত্রনেতারা। এ জুয়াকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট নগরীর বালুচর, বড়বাজার, শেখঘাট, মদিনা মার্কেট, বন্দরবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত ‘ডিজিটাল জুয়ার’ আসর বসে। ভারতের শিলং থেকে www.teercounter.com এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার আসরটি (কথিত লটারি) পরিচালনা করা হয়। প্রতিদিন বিকাল সোয়া ৪টায় ও সাড়ে ৫টায় দুবার ড্র হয়। ড্রর ফলাফল দেওয়া হয় অনলাইনে। লটারি বিজয়ী তার বাজির টাকার ৭০ গুণ বেশি পেয়ে থাকেন। জুয়ার আসর পরিচালনাকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তারা শিলংয়ের জুয়াড়িদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। সিলেটের যারা লটারিতে অংশ নেন তাদের পছন্দের নম্বরটি অনলাইনে বুকিং দেওয়া হয়। বিজয়ীদের টাকার পরিমাণ কম হলে তা তত্ক্ষণাৎ পরিশোধ করা হয়, আর বেশি হলে ভারত থেকে এনে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সময় নেওয়া হয় তিন থেকে সাত দিন। জুয়ার টাকা ভারত ও বাংলাদেশে হুন্ডি ও সীমান্তের চোরাপথে লেনদেন হয়। জানা যায়, লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যা কিনে নেওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। লটারিতে একটি নম্বরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। জুয়ার আসরে বিভিন্ন পেশার লোকজন বাজি ধরলেও এতে বেশি আগ্রহী দিনমজুররা। ১ টাকায় ৭০ টাকা পাওয়ার আশায় তারা সারা দিনের পারিশ্রমিক জুয়ায় বাজি ধরেন। এ জুয়ার আসরকে কেন্দ্র করে সিলেটে বিভিন্ন সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। শহরতলির বালুচরে জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ। তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন কয়েকজন। ভারতের শিলংয়ে তীর কাউন্টার নামক জুয়া খেলা চলে আসছে এক যুগের বেশি। গত চার-পাঁচ বছরে এ খেলা ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে। ধীরে ধীরে এর বিস্তার ঘটে সিলেট নগরীতে। এখন সিলেটের প্রায় সব উপজেলায় এ জুয়ার আসর বসে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ জানান, শিলংয়ে অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত জুয়া খেলা সিলেটে সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এ খেলায় মানুষ এতই আসক্ত হয়েছে যে, একই পরিবারের বাবা-মা-ছেলে মিলে জুয়ায় বাজি ধরছেন। পুলিশ জুয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। যেখানেই জুয়ার আসরের খবর পাচ্ছে সেখানেই স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অপারেশন চালাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর