বুধবার, ১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

এমপি সাহেবদের খুশি করার প্রকল্প চাই না

রুহুল আমিন রাসেল

এমপি সাহেবদের খুশি করার প্রকল্প চাই না

ড. মামুন রশীদ

দেশের জাতীয় বাজেটে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি—এডিপিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য নতুন নতুন বড় প্রকল্প খুব একটা আসছে না বলে মনে করেন অর্থনীতির বিশ্লেষক বিশিষ্ট ব্যাংকার ড. মামুন রশীদ। তার মতে, ‘আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য বা এমপি সাহেবদের খুশি করতে ছোট ছোট প্রকল্প আসছে। এ ধরনের প্রকল্প দিয়ে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসছে না।’

২০১৬-১৭    অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সামনে রেখে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশি-বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে দায়িত্ব পালনকারী এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার বলেন, ‘বাজেটে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা আসছে না। এটা উন্নতও হচ্ছে না। প্রকল্প সাহায্য হিসেবে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরকারের পাইপ লাইনে থাকার পরও আমরা ২ থেকে ১ বিলিয়ন ব্যবহার করতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকদের দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।’ ড. মামুন রশীদ মনে করেন, ‘নতুন অর্থবছরের বাজেটে এবার অনেক পরিবর্তন আসছে। এটা গতানুগতিক বাজেট না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের শুল্ককর কমিয়ে আনতে হচ্ছে। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নে আয়কর আদায় বাড়ছে না। ফলে সরকারকে ভ্যাটের দিকে নজর দিতে হচ্ছে। নতুন বাজেটে ভ্যাট আইন একটা নতুন ব্যাপার হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থ বিভাগেও নতুনত্ব আসছে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে আধুনিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ আসবে।’ বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের মতে, নতুন অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অনেক পরিবর্তন আসবে। সরকারের রাজস্ব আদায়ে আমদানি শুল্ককর-নির্ভরতা থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট-নির্ভরতার একটা প্রতিফলন থাকতে পারে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে। এই বাজেটে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব ধরা হয়েছে ভ্যাট আদায় থেকে। নতুন অর্থবছরে ভ্যাট থেকে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পরই রয়েছে আয়কর। এখান থেকে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা এবং সর্বনিম্নে আমদানি শুল্ক থেকে আসবে প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থনীতিবিদের মতে, নতুন ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ আগামী ১ জুলাই ২০১৬ থেকে পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন করে এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় কর প্রণোদনা প্রদান এবং কর অবকাশ সুবিধা অব্যাহত থাকতে পারে। প্যাকেজ ভ্যাট প্রথাও বর্ধিত হারে বহাল রাখা যেতে পারে। বিদ্যমান ভ্যাট আইনে সুপারশপ ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের অতিরিক্ত ৪ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে থাকেন। তবে নতুন ভ্যাট আইনে তাদের শুধু ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। নতুন ভ্যাট আইনে ট্যারিফ ভিত্তিতে ভ্যাট নির্ধারণের সুযোগ না থাকায় কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এ বিষয়টি সরকারের বিশেষ বিবেচনা আশা করে। মোটা দাগে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ফলে যেন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি না বাড়ে, সেদিকেও সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন।

কেননা বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বাড়লে, সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব আয় উন্নয়নে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারবে না। ড. মামুন রশীদ মনে করেন, ‘যত দিন আমাদের অর্থনীতি ছোট ছিল, তত দিন উচ্চহারে রাজস্ব আদায় ঠিক ছিল। বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগোতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। প্রয়োজনীয় খাতে অধিক ব্যয়ের জন্য অধিক আয় করতে হবে। ক্রমাগত অর্থনীতির মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতিকে এবং সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য আমাদের অভিনব উপায়, খাতওয়ারি নিবিড় পর্যালোচনা ও কঠিন সংস্কারের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নতুনত্ব আনতে হবে।’

সর্বশেষ খবর