বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

সৌদি কূটনীতিতে নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর সফরে হবে তিন চুক্তি, ছয় সমঝোতা স্বাক্ষর

রুহুল আমিন রাসেল

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতি ও উন্নয়নের সহযোগী হতে সম্ভাবনার পেখম মেলছে সৌদি আরব। কেবল দক্ষ শ্রমিকই নয়, অভিজ্ঞ চিকিৎসক- প্রকৌশলীদের মতো পেশাজীবীদেরও নেবে সৌদি আরব। তাদের আগ্রহ বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়েও। এরই প্রতিফলন দেখা যেতে পারে আগামীকাল ৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ৩ থেকে ৭ জুন পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র সৌদি আরবে এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন দুই দেশের শীর্ষ নেতারা। এতে সৌদির সঙ্গে বিনিয়োগ, ভিসা সহজীকরণ ও সংস্কৃতি সহায়তাবিষয়ক তিনটি চুক্তি হবে। এ ছাড়া শিক্ষা, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, খাদ্য ও ওষুধ, মিডিয়া-সংক্রান্ত ছয়টি সমঝোতা স্মরক স্বাক্ষরেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক উন্নয়নে এফবিসিসিআইর সঙ্গে সৌদি কাউন্সিল অব চেম্বার অব কমার্সের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ও কয়েকজন প্রভাবশলী মন্ত্রী এবং আমলা ছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন এফবিসিসিআইর নেতৃত্বাধীন দেশের শীর্ষ ১০ ব্যবসায়ীর একটি প্রতিনিধিদল। ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরের সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সালমান এফ রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এত দিন সৌদি আরব বাংলাদেশি চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের ভিসা দিত না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে আমাদের চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের বিশাল বাজার উন্মুক্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব চায় হালাল পণ্য। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে আমরা মাছ, মাংস, হজের কাপড়, জায়নামাজ ও টুপি রপ্তানি করতে চাই। পাশাপাশি বর্তমানে দেশে ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে। এখানে আমরা সৌদির বিনিয়োগও চাইব।’

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বিগত ২৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সৌদি আরবের সঙ্গে বাণিজ্যে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রতি বছর বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। তবে প্রতি বছরই সৌদি থেকে বাংলাদেশের আমদানি যেমন বাড়ছে, তেমন রপ্তানিও বাড়ছে। মাঝখানে বাণিজ্য ব্যবধান প্রায় আকাশ-পাতাল। যেমন বাংলাদেশ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানির বিপরীতে রপ্তানি করেছে মাত্র ১৮৬ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ ওই অর্থবছর সৌদিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য-ঘাটতি ৬৪২ মিলিয়ন ডলার। আর পাঁচ বছর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে সৌদিতে ৩ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ আমদানি করেছিল ৫৩ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামগ্রী। এফবিসিসিআইর তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে রপ্তানি হয় কৃষিপণ্য, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কেমিক্যাল, বস্ত্র ও কাগজ-জাতীয় পণ্য ইত্যাদি। এসব পণ্য রপ্তানির বিপরীতে সৌদি থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে পানীয়, রাবার, কেমিক্যাল, পাল্প, ভেজিটেবল, অয়েল, কোক ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর