শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

শেষ ধাপের ভোটযুদ্ধ কাল

গোলাম রাব্বানী

আজ শুক্রবার রাত পোহালে কাল ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। গতকাল শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে। আগামীকাল দেশের ৭১০ ইউপিতে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের জনপ্রিয় এ ভোট উৎসব শুরু হয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা-অজানা শঙ্কা বিরাজ করছে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে। কারণ ভোট পর্বে বেড়ে চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধাপের ভোট গ্রহণে ব্যাপক সহিংস ঘটনার পর ষষ্ঠ ধাপের ভোট নিয়ে তাই ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জাল ভোট ও ব্যালট ছিনতাইয়ের আশঙ্কাও করছেন প্রার্থীরা। সম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা। সবকিছু মিলিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে নির্বাচনী এলাকায়। সাধারণ ভোটাররাও কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ধাপের ভোট হওয়ার কথা ছিল ৭১০ ইউপিতে। কিন্তু ইউপির সংখ্যা কিছুটা বাড়তে-কমতে পারে। আজ ইসি এ সংখ্যা চূড়ান্ত করবে। কর্মকর্তারা আরও জানান, ষষ্ঠ ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৩ হাজারের বেশি। এ ধাপেও ২৮ জন একক প্রার্থী হিসেবে ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। তবে আগের পাঁচটি ধাপে বিনা ভোটে নির্বাচিত ১৯৩ জনের সবাই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হলেও ষষ্ঠ ধাপে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। ২২ মার্চ প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৫৪, ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৩৪, ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপে ২৯, ৭ মে চতুর্থ ধাপে ৩৫ এবং পঞ্চম ধাপে ৪১ জন বিজয়ী হয়েছেন। সব মিলে ছয় ধাপে ২২১ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন।

প্রচার-প্রচারণা শেষ : এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ  হয়েছে গতকাল দিবাগত রাত ১২টায়। তাই এদিন ভোর থেকেই গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানিয়েছে, গতকাল মধ্যরাতে বন্ধ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার, সভা-সমাবেশ ও শোডাউন নিষিদ্ধ। ভোটের পর ৪৮ ঘণ্টাও কোনো মিছিল করা যাবে না। প্রচারের সময় শেষ হওয়ার আগে বহিরাতগতদের ছাড়তে হবে নির্বাচনী এলাকা। কাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট চলবে। ভোট উপলক্ষে এদিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় থাকছে সাধারণ ছুটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে : গোলযোগ-সহিংসতার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় এ নির্বাচনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনাসংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ২০ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত রাখা হচ্ছে এবারেও। ভোটের আগের দুই দিন থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত চার দিন থাকবেন তারা। পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা সদস্য বাড়াবে স্থানীয় প্রশাসন। ইউপি ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় উপজেলাভিত্তিক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তিন প্লাটুন করে বিজিবি রাখা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে র‌্যাবের তিনটি টিম। প্রতি ইউনিয়নে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। অবশ্য ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ইসির কর্মকর্তারা। এ ছাড়া আজ বিকালের মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, এপিবিএন, আনসার ব্যাটালিয়ন ও আনসার-ভিডিপির প্রহরা। টহলে থাকবে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। শেষ মুহূর্তেও প্রার্থীদের শঙ্কা : ইউপিতে ভোট কেন্দ্র দখলের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রায় প্রতি ইউপিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি অনেক প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর