শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

পেটানোর পর ১৪০০ নার্সের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

আন্দোলন অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের বাসার সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪০০ নার্সের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে ধানমন্ডি থানার এসআই রায়হান হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পুলিশের ধানমন্ডি জোনের এসি রুহুল আমিন সাগর বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। ওই মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নার্সদের হামলায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

এদিকে, ধানমন্ডিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশি হামলা এবং মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারিভাবে ৩ হাজার ৬১৬ জন নার্স নিয়োগের আজকের (শুক্রবার) পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিবিএনএ) ও বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটি (বিবিজিএনএস)। তারা পরীক্ষা বাতিল করে আগের নিয়মে ব্যাচ, মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে ঢাকা নার্সিং কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। মামলা ও পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সারা দেশ থেকে ১০ হাজারেরও বেশি নার্স লাগাতার এ অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা নার্সিং কলেজের সামনে হাজার হাজার নার্স অবস্থান নিয়েছেন। তারা পরীক্ষা বাতিল ও ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। কলেজ এবং আশপাশের দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে হাতে লেখা পোস্টার। অনেকের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। বেশির ভাগ নার্স ছিলেন ক্লান্ত। অনেকের সঙ্গে স্বামী ও সন্তান রয়েছেন। কর্মস্থল এবং ক্লাস বর্জন করে এসব নার্স দাবি আদায়ে একত্রিত হয়েছেন। প্রচণ্ড রোদও তাদের কাছে যেন হার মেনেছে। ঘর্মাক্ত শরীরে দাবি আদায়ে অনড় নার্সেরা। অনেকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ২০০৭ সালে ঢাকা নার্সিং কলেজ থেকে পাস করা সালমা খাতুন নার্সদের ওপর পুলিশের হামলার ধিক্কার জানিয়ে বলেন, ‘পুলিশ হামলা করে আবার পুলিশই বাদী হয়ে মামলা করে! মামলার ঘটনা উদ্বেগজনক। অবিলম্বে মামলা ও পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, পুলিশি হামলার সময় গর্ভবর্তী দুজন নার্সকে পেটে লাথি দেওয়া ন্যক্কারজনক ঘটনা। এতে তাদের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা ফেলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা মুমূর্ষু অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ২০০৬ সালে রংপুর মেডিকেল থেকে পাস করা একজন নার্স বলেন, ‘তাদের ব্যাচের এখনো ২৭০ জনের নিয়োগ বাকি রয়েছে। বর্তমান সময় পর্যন্ত বেকার নার্সের সংখ্যা ২১ হাজার ৫০০। প্রতি বছর ডিপ্লোমা করে ৩ হাজার ৭০০ নার্স বের হচ্ছেন। ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। ব্যত্যয় ঘটলে নার্স প্রফেশন ছেড়ে প্রয়োজনে গার্মেন্টে চাকরি করব।’ ২০০৯ সালে পটুয়াখালী নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা হাসি সমদ্দার বলেন, ‘একটানা আন্দোলন এবং গরমে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা স্থান ত্যাগ করব না।’ প্রসঙ্গত, আগের নিয়মে ব্যাচ, মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে বিডিবিএনএ ও বিবিজিএনএস দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। ২৬ এপ্রিল নার্সেরা আমরণ অনশন শুরু করেন। ১ মে নার্স নেতাদের নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আশ্বাসের সাত দিনের মাথায় নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি)। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ আখ্যা দিয়ে আবারও আন্দোলন শুরু করেন নার্সেরা। বিবিজিএনএসের সাধারণ সম্পাদক নাহিদা আক্তার বলেন, ‘ধানমন্ডিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যৌথ হামলায় দেড় শতাধিক নার্স আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা খুবই দুঃখজনক এবং উদ্বেগের বিষয়। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার ঘটনায় রোকসানা ও নবীনচন্দ্র নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানিকচন্দ্র রায় ও বেঞ্জামিন দাস নামে দুজন মৃত্যুযন্ত্রণায় ভুগছেন। দুজন নার্সকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ বিডিবিএনএর মহাসচিব ফারুক হোসাইন বলেন, নতুন সৃজিত সিনিয়র স্টাফ নার্সের ১০ হাজার ও বর্তমানে শূন্য ৩ হাজার ৭২৮— মোট ১৩ হাজার ৭২৮টি পদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ ডিপ্লোমা-ইন-নার্সিং ডিগ্রিধারী রেজিস্ট্রার্ড নার্সের এবং ১১ শতাংশ বেসিক বিএনসি-ইন-নার্সিং ডিগ্রিধারী রেজিস্ট্রার্ড নার্সের মধ্য থেকে পূরণসাপেক্ষে দ্রুত নার্স নিয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সরকার নার্সদের প্রতি সহানুভূতিশীল : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, সরকার নার্সদের প্রতি সহানুভূতিশীল। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নার্সদের নিয়োগের দাবি সরকার সহানুভূতিশীলতার সঙ্গে সব সময় বিবেচনা করে। বেকার নার্সদের আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি গতকাল এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সদের প্রতি আন্তরিকভাবে সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল বলেই নার্সদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছেন। পাশাপাশি তিনি দ্রুত ১০ হাজার নার্স নিয়োগেরও নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৩ হাজার ৬০০ নার্স নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ৭ হাজার নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে আরও ৩ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমেই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। কোনোভাবেই এর ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। অন্য কোনোভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তাদের চাকরিতে স্থায়ীকরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, দেশের নার্স সংকট এবং বেকার নার্সদের অবস্থা বিবেচনা করে ৩ হাজার ৬০০ নার্স নিয়োগ ত্বরান্বিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্র্রেক্ষিতে পাবলিক সার্ভিস কমিশন ১০০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার শর্ত শিথিল করে শুধু বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সম্মতি প্রদান করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ৩ জুনের নার্স নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দেশের সব বেকার নার্স সহযোগিতা করবেন।

সর্বশেষ খবর