শনিবার, ৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

উদগ্রীব সৌদিকে আশ্বস্ত করবে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেদ্দায়, কাল বাদশাহর সঙ্গে বৈঠক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সন্ত্রাসবাদবিরোধী নতুন জোট গঠন করা সৌদি আরব বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব। নতুন এ উদ্যোগে বাংলাদেশের সেনাদের অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি চায় দেশটি। স্পর্শকাতর এ ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রস্তাব একবাক্যে নাকচ করে দিলেও ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে সৌদি আরবের প্রস্তাব। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ মর্যাদা পাওয়া সৌদি আরবের যে কোনো ইস্যুতে পাশে থাকার নীতি মেনে চলে আসা বাংলাদেশ এবারও ব্যতিক্রম করছে না। গতকাল বিকালে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে রাতে সৌদি আরবের জেদ্দায় পৌঁছানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন বার্তাই দেবেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন

 আবদুল আজিজকে। বলবেন, ‘ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার প্রয়োজনে এবং বৈশ্বিক উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেনা পাঠাতে বাংলাদেশ আগেও পিছপা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।’ সফরে বাংলাদেশের আগ্রহের মধ্যে আছে একটি বৃহৎ সার কারখানাসহ বড় কয়েকটি অবকাঠামো খাতে সৌদি আরবের বিনিয়োগ ও দ্রুততম সময়ে ভিসা সংকটের সমাধান হওয়া। অবশ্য এসবের বাইরে বিভিন্ন খাতে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতিও রয়েছে দুই দেশের। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, সফরসঙ্গীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইট গতকাল বিকাল ৪টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলসহ প্রধানমন্ত্রী ৭৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মন্ত্রিসভার সদস্য ও তিন বাহিনীর প্রধানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। পরে সৌদির স্থানীয় সময় রাত ৮টার কিছু পরে বিমানটি জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে সৌদি সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। সৌদি আরব সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জেদ্দা রয়্যাল কনফারেন্স প্যালেসে অবস্থান করবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী গত রাতেই পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য মক্কার হারাম শরিফের উদ্দেশে রওনা দেন। ওমরাহ শেষে ভোরে ফজরের নামাজ আদায়ের পর শুরু হবে সফরের অন্যান্য কর্মসূচি। বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ সিংহাসনে আসীন হওয়ার পর এটাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সৌদি আরব সফর। আর গত সাড়ে সাত বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটা তৃতীয় সৌদি সফর। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের এপ্রিলে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে এবং ২০১৩ সালের নভেম্বরে ওমরাহ পালনের উদ্দেশে দুই দফা সৌদি আরব সফর করেন। সফরসূচি অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী আজ বিকালে জেদ্দায় এক অনুষ্ঠানে রিয়াদে বাংলাদেশের চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স এবং বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। আগামীকাল সকালে জেদ্দা রয়্যাল কনফারেন্স প্যালেসে সৌদি প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী সালমান বিন সুলতান আল সৌদ এবং সৌদি বাদশাহর রয়্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা ইয়াসের আল মিয়াসহ কয়েকজন সৌদি মন্ত্রী ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দুপুরে জেদ্দার আল আন্দালুসে সৌদি বাদশাহর আল সালাম প্রাসাদে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন নায়েফ বিন আবদুল আজিজ বাদশাহর প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহর সঙ্গে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়েও আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রকল্পে সৌদি সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং হজ ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বিমানে জেদ্দা থেকে মদিনায় পৌঁছে উঠবেন হিলটন হোটেলে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে মসজিদে নববীতে আসর ও মাগরিবের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন এবং হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করবেন। মঙ্গলবার মদিনার প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন আবদুল আজিজ বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়ে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকায় অবতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর