রবিবার, ৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
দিল্লির চিঠি

পাঁচ দেশ ঝড়ো সফরে মোদি

ঋতুপর্ণা রায়, নয়াদিল্লি

পাঁচ দেশ ঝড়ো সফরে মোদি

মধ্যাহ্নভোজন আফগানিস্তানের হেরাতে। নৈশভোজ কাতারে। পরদিনের খাওয়া-দাওয়া সুইজারল্যান্ডে। তারপরের দুই দিন ওয়াশিংটন ডিসি এবং সবশেষে মেক্সিকো সিটি। দীর্ঘদিন  ‘গৃহবন্দী’ থাকার পর আবার পায়ের তলায় শর্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির! ছয় দিনে পাঁচটি দেশের সফরে গতকাল সকালে রওনা দিয়েছেন তিনি। এরকম ঝড়ো সফর সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ক্যালেন্ডারে নজিরবিহীন। ‘অতিরিক্ত’ বিদেশ সফরের জন্য ঘরোয়া রাজনীতিতে ব্যঙ্গোক্তির মুখোমুখি হওয়া খোদ মোদিও এর আগে এতটা ঠাসা সফরে যাননি। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, পৃথক পৃথক দীর্ঘমেয়াদি সফর না করে একটি মাত্র উড়ানেই অনেক পাখি শিকারের কৌশল নিয়েছেন মোদি। ঘরোয়া রাজনীতি, বিনিয়োগ টানা এবং সর্বোপরি পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থায় (এনএসজি) ভারতের অন্তর্ভুক্তির জন্য দরবার করা মোদির তালিকায় থাকছে এই বিষয়গুলো। তারই ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ বৈঠকে ভাষণ দেবেন তিনি। আগামী ৯ জুন ভিয়েনায় বসছে এনএসজি’র অধিবেশন। ভারত এই সংস্থাকে সরকারিভাবে চিঠি লিখে ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্তির জন্য দাবি জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে বাদ সেধেছে বেইজিং। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তার সদ্য সমাপ্ত চীন সফরে গিয়ে চীনের এহেন আচরণে ভারতের উষ্মার কথাও জানিয়ে এসেছেন। তবে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় দৌত্যে বরফ গলার আশা কম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, ওই সংস্থার সদস্য দেশগুলোর অধিকাংশের সমর্থন পকেটে থাকলে, তবেই শেষ পর্যন্ত চীনের দেয়াল টপকানো সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘শক্তিক্ষেত্রে ভারতের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। সেই সঙ্গে এই বিবেচনাও ভারত বরাবরই করে আসছে যে সেই শক্তি হতে হবে দূষণমুক্ত। সে ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির প্রয়োজন অপরিসীম। আমাদের ঘরোয়া বাজারে যেমন পরমাণু শক্তির প্রয়োজন, তেমনই ভবিষ্যতে শিল্প বাড়লে আমরা তা অন্য দেশগুলোতে রপ্তানিও করতে পারব।’ এনএসজির সদস্য হতে পারলে পরমাণু শক্তি আমদানির দরজাটা খুলে যাবে ভারতের কাছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বক্তব্য, আসন্ন সফরে মেক্সিকো অথবা সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোকে ভারত তার পরমাণু শক্তি ব্যবহারের খতিয়ান তুলে ধরবে। পরমাণু সম্প্রসারণবিরোধী চুক্তিতে সই না করার কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বিরোধিতা তৈরি হচ্ছে, নিজেদের রেকর্ড দেখিয়ে তাকে নির্মূল করার চেষ্টা করবেন প্রধানমন্ত্রী। তারই মহড়া হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ‘এনএসজি হলো কিছু রাষ্ট্রের নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা। তা সদা পরিবর্তনশীল। কিন্তু এনপিটি হলো একটি চুক্তি। দুটির মধ্যে গুলিয়ে ফেললে তো চলবে না।

আপেল আর কমলা এক নয়।’ আসন্ন সফরে এই আপেল এবং কমলার পার্থক্যই তুলে ধরবেন মোদি। পাশাপাশি ঘরোয়া রাজনৈতিক একটি দিকও মোদির সফরে প্রাধান্য পেতে চলেছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। লোকসভা ভোটের সময় বিজেপি’র রাজনৈতিক ইস্তেহারেও এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত দুই বছরে এই বাবদে কার্যত অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে মোদি সরকার। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে সংসদের বাইরে এবং ভিতরে সরকারকে আক্রমণ করেছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। অস্বস্তি বেড়েছে মোদি সরকার তথা প্রধান শাসক দল বিজেপির। সুইজারল্যান্ডে মোদির একদিনের সফরে এই নিয়ে যে বিরাট অগ্রগতি হবে বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু সে দেশের সরকারের সঙ্গে কালো টাকা পুনরুদ্ধার নিয়ে যে আলোচনা হবে, তাকে দেশে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

সর্বশেষ খবর