বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

এসপির স্ত্রী হত্যায় জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকে কাপুরুষোচিত বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ সৌদি আরবের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় মদিনা হিলটন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পাঁচ দিনের সৌদি আরব সফর শেষে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার সৌদি আরব পৌঁছার পর ওমরাহ পালন করা প্রধানমন্ত্রী সোমবার রাতে মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে এসেছেন।

বার্তা সংস্থা বাসসের তথ্যানুসারে, প্রবাসীদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর কোনো দোষ ছিল না। অথচ বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পথে তাকেই বাচ্চার চোখের সামনে খুন করা হলো। এটা খুবই দুঃখজনক ও কাপুরুষোচিত একটি ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। আমরা চাই এ ধরনের আর কোনো ঘটনা যেন বাংলাদেশে কখনো না ঘটে। যারা একসময় বাস, ট্রেন, লঞ্চে বোমা ছুড়ে মেরেছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই এখন গুপ্তহত্যায় নেমেছে।’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছে। এতে বিপুল অঙ্কের বাজেট প্রণয়ন অতীতের কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ একে ‘‘বিস্ময়কর’’ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু আমি বলি, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। এটা আমাদের দেশের জনগণের জন্য ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধ। আমরা সব সময়ই জনগণের কল্যাণের বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করি, যে কারণে প্রয়োজনে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারি।’

সৌদি বাদশার সঙ্গে বৈঠকসহ সৌদি আরব সফরের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর দিকেই তার লক্ষ্য থাকবে। বাংলাদেশ সব সময়ই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা প্রতিরোধে তার দেশ ইসলামী জোটে শরিক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। সৌদি আরবের আইনকানুন মেনেই সেখানে বসবাসেরও আহ্বান জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

পরে গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে মদিনার প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন আবদুল আজিজ বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। মদিনার ডেপুটি গভর্নর আবদুল মহসিন আল মুনেফ, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এবং জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এ কে এম শহীদুল করিম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। পরে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার কিছু পরে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

সৌদি বাদশা সালমানের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের পাঁচ দিনের সৌদি আরব সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাইলফলক মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাদশা সালমান দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম সৌদি আরব সফর। এর আগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ওমরাহ করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন এবং ২০০৯ সালে গিয়েছিলেন দ্বিপক্ষীয় সফরে। এবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হন ছোট বোন শেখ রেহানা, কয়েকজন আত্মীয় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন সচিব।

সর্বশেষ খবর