বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

সহিংস ভোটে নিরাপত্তা ব্যয় ৩০০ কোটি

গোলাম রাব্বানী

সহিংস ভোটে নিরাপত্তা ব্যয় ৩০০ কোটি

সংঘাত-অনিয়মের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পাঁচ শত কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যয় হয়েছে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। তবে এবারের মোট ব্যয় সর্বশেষ ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনের ব্যয়ের তিনগুণের বেশি। ইতিমধ্যে ছয় ধাপের ভোটে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয়ে গেছে। এ ছাড়া শেষ দিকের নির্বাচনী সামগ্রীসহ অন্যান্য বাবদ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ও নিরাপত্তা খাতে ৫৫ কোটি টাকার নতুন চাহিদা আসতে পারে। এর মধ্যে পরিচালনা খাতে ৪০ শতাংশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাখাতে ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে। ছয় ধাপের ভোট শেষে নবম ইউপি নির্বাচনের ব্যয়ের এ চিত্র পাওয়া গেছে। এবার নির্বাচনী সহিংসতায় শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। দলভিত্তিক প্রথমবারের মতো ইউপি ভোটে ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোটসহ অনিয়মের অভিযোগও ছিল ব্যাপক। গত ফেব্রুয়ারিতে তফসিল  ঘোষণার পর চার মাস ধরে ছয় ধাপে চার হাজারেরও  বেশি ইউপির ভোট শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ইতিমধ্যে ৪১০  কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শেষ দিকে ভোটের জন্য নির্বাচনী সামগ্রীসহ অন্যান্য বাবদ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ও নিরাপত্তা খাতে ৫৫ কোটি টাকার নতুন চাহিদা আসতে পারে। বিদায়ী অর্থ বছরের বাজেট থেকে বাকি অর্থের সংস্থান করে সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ বিষয়ে ইসির উপসচিব রকিবউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ভোট শেষ হওয়ায় সার্বিক ব্যয় পর্যালোচনা চলছে। সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে সিংহভাগই যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। এবারের ইউপি নির্বাচনের ব্যয় সর্বশেষ ২০১১ সালের ব্যয়ের তিনগুণের  বেশি। ২০০৩ সালের ইউপি ভোটের ৮ গুণ। এবার ছয় ধাপের ভোট শেষে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের হিসেবে দেখা  গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জন্য রয়েছে প্রায় ২৩৭ কোটি টাকা। ব্যালট পেপার মুদ্রণ, নির্বাচন সামগ্রী কেনা, পরিবহন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভাতাসহ নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় রয়েছে প্রায় ১৭৩ কোটি টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ বাহিনী প্রায় ৮৩ কোটি টাকা, আনসার-ভিডিপি প্রায় ১২৫ কোটি টাকা, বিজিবি প্রায় ২৯ কোটি টাকা এবং কোস্টগার্ড ৪২ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ পেয়েছে। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা খাতে ৫৮ শতাংশ ও পরিচালনা খাতে ৪২ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। বাকি অর্থ বরাদ্দ  দেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলায় ৬০ শতাংশ ব্যয় দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন একজন কর্মকর্তা। মোট ব্যয়ের হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৯৯২ সালে ৬১.৬৮ শতাংশ, ১৯৯৭ সালে ৫৯.০৯ শতাংশ, ২০০৩ সালে ৫৪.৮২ শতাংশ এবং ২০১১ সালে প্রায় ৫৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। ২০১১ সালে ইউপি ভোটে পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলায় ১৪৭ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পায়। যার অর্ধেকেরও বেশি গেছে নিরাপত্তা খাতে। ২০০৩ সালে ব্যয় হয় ৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ১৫২ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ২৭  কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ১৫২ টাকা এবং পুলিশ, আনসার ও তৎকালীন বিডিআরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগে ১৯৯২ সালে ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ১৯৯৭ সালে ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। গত দশম সংসদ নির্বাচনে  মোট ব্যয় হয় ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর  পেছনে ব্যয় হয় ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা। এবার ইউপিতে শতাধিক প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগে ১৯৮৮ সালে অন্তত ৮০ জন, ২০০৩ সালে অন্তত ৮৩ জন এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের ইউপিতে অন্তত ১০ জন নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন বলে তথ্য রয়েছে ইসিতে।

সর্বশেষ খবর