শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

কার্গো বিশৃঙ্খলায় শাহজালাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

কার্গো বিশৃঙ্খলায় শাহজালাল

বেশ কিছু দিন ধরেই হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ব্রিজে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে অব্যবস্থাপনা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, উত্তর পাশে বোর্ডিং ব্রিজ পর্যন্ত মালামাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেখানে সেখানে পড়ে আছে। এতে বিমানে উঠানামায় যাত্রীদেরও নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিমান ভিড়তেও সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিভিল এভিয়েশন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রায় অচল হয়ে পড়েছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দরটি।

জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে মালামাল কার্গো ব্রিজে বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে আছে। কার্গো বিমানের মালামালগুলো খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পুড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। সময়মতো মালামাল হ্যান্ডলিং হচ্ছে না। মালামাল বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডিং ব্রিজের সামনেও এখন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানেও বিশৃঙ্খলভাবে কার্গোর মালামাল পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে যাত্রীদের বিমানে উঠতেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। এদিকে শাহজালালে লাগেজ হ্যান্ডলিং নিয়ে সেই পুরনো সমস্যার এখনো কোনো সমাধান হয়নি। এ নিয়ে যাত্রীদের নানা অভিযোগ থাকলেও নিয়ম-শৃঙ্খলায় আসতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সারা দুনিয়ায় বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা আগে লাগেজ পেলেও বাংলাদেশে এর উল্টো। বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা তাদের মালামাল পাচ্ছেন অনেক বিলম্বে। সেক্ষেত্রেও যাত্রীরা নানামুখী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সাধারণ যাত্রীরা কর্মকর্তাদের নির্দয় আচরণে প্রতিদিনই নানাভাবে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীদের মালামাল হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে বাংলাদেশ বিমান। কিন্তু বাস্তবমুখী ব্যবস্থাপনা না থাকায় মালামাল পেতে সময় লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এক ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, দুবাই এমনকি কলকাতায় যাত্রীরা বিমান থেকে নামার ১০ মিনিটের মধ্যেই লাগেজ পেয়ে যান। সেক্ষেত্রে শাহজালাল বিমানবন্দরে এখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা মালামালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ নিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সূত্র মতে, নানা অনিয়মের মধ্যে চলছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ শাখার কর্মকাণ্ড। ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা রেডলাইনকে দায়িত্ব দেওয়ার পর অনিয়মের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। তাদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পণ্য স্ক্যানিং করার নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করা হচ্ছে। এমনকি পণ্য পাঠানোতেও হয়রানি  পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা, দুর্নীতি-লুটপাট দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির গ্রেড উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।  প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল ছাড়াই কার্গো শাখার কাজ পরিচালনা নিয়ে নানা প্রশ্ন্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। যাত্রী সাধারণের অভিযোগ, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালালে যাত্রীসেবার মান ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে। যাদের ওপর যাত্রীদের সেবা দেওয়ার দায়িত্ব, তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই উল্টো হয়রানি করছেন যাত্রীদের। দায়িত্ব পালন আর সেবার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকাকড়িসহ মূল্যবান সামগ্রী। রক্ষকরাই এখন ভক্ষকে রূপ নিয়েছে। ঈদ মৌসুম বা বড় কোনো দিবসে  বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানির মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যত বেশি হয়রানি তত বেশি টাকা, এটা এখন এই বিমানবন্দরে পরিচিত স্লোগান। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি বাদেও রয়েছে ভিন্ন ধরনের হয়রানি। একসঙ্গে কয়েকটি ফ্লাইট উঠানামা করলে যেন ভেঙে পড়তে চায় পুরো বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা। বিশৃঙ্খল সৃষ্টি হয় সর্বত্রই। সূত্র মতে, ইমিগ্রেশনের কম্পিউটার ও এর সার্ভার আধুনিক নয়। বিদ্যুতের ভোল্টেজের ওঠানামায় সার্ভার বসে যায়। কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথেষ্ট দক্ষ নন। সব মিলিয়ে কাজ চলে মন্থরগতিতে। যাত্রীদের প্রতীক্ষার প্রহর হয় দীর্ঘ। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) রিডারের অভাবে পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাজগপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সময় লাগে প্রচুর। দিল্লি ফেরত এক যাত্রী বলেন, দিল্লির কাস্টমস-ইমিগ্রেশন কাগজপত্র ঠিক করতে জনপ্রতি সময় নেয় মাত্র এক থেকে পাঁচ মিনিট। আর একই কাজ করতে এখানে সময় লাগল কমপক্ষে এক ঘণ্টা। এখানে কেউই যাত্রীসেবার জন্য নেই। ট্রলিও খুঁজে পাওয়া যায় না। সবাই অপেক্ষায় থাকেন বখশিশ আদায়ের জন্য। সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানবন্দরের স্ক্যানিং তল্লাশির সক্ষমতা বাড়ানোসহ যাত্রী ও কার্গোর নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার তা-ই করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশের স্ক্যানিং টেকনোলজির আলোকে আমরা সেদিকে যাচ্ছি। তবে কার্গো হাউসে অনিয়ম হচ্ছে তা সত্য। এর পরও আমাদের চেষ্টার কমতি নেই।’

সর্বশেষ খবর