শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

পোশাক খাতে ভারতের সিদ্ধান্তে আপত্তি বাংলাদেশের

প্রস্তাব প্রত্যাহারের অনুরোধ ঢাকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে সম্পূরক শুল্ক (সিভিডি ভিত্তিমূল্য) বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ভারত। দেশটি তার নতুন বাজেটে এ প্রস্তাব এনেছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দিল্লির কাছে আপত্তি জানিয়েছে ঢাকা। গতকাল দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় জয়েন্ট ট্রেড কমিশনের (জেটিসি) বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে সিভিডির ভিত্তিমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। জানা গেছে, নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির জন্য কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি বা সিভিডির ভিত্তিমূল্য যা রয়েছে তা দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ভারতের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ৩০ শতাংশের ওপর নির্দিষ্ট হারে সিভিডি পরিশোধ করতে হয়। এ ভিত্তিমূল্য বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব পাস হলে পণ্যের খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশের ওপর সিভিডি বা সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এতে প্রস্তাবিত শুল্কের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছেন ব্যবসায়ীরা।

মাদক ও অস্ত্র ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে ভারত। তবে ২০১৩ সালে দেশটির বাজেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর সিভিডি আরোপ করে বিল পাস করা হয়। তখন থেকেই ওই সম্পূরক শুল্কারোপের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে তা প্রত্যাহারের জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে একাধিকবার অনুরোধ করা হয়। ওই সময় দিল্লির কাছে লেখা এক চিঠিতে ঢাকা জানিয়েছিল, ‘ভারতের নয়া বাজেটে তাদের তৈরি পোশাকশিল্পে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আরোপিত সিভিডি বহাল রয়েছে। ফলে এতদিন দুই দেশের তৈরি পোশাক বাণিজ্যে শুল্কারোপে যে সমতা (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) ছিল তা নষ্ট হয়েছে। এ বাণিজ্যসমতা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় শুল্কের অনুরূপ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর আরোপিত সিভিডি প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করে বাংলাদেশ।’ ঢাকার এ চিঠির পরও সিভিডি প্রত্যাহার করেনি দেশটি, বরং তিন বছর পর এবার নতুন বাজেটে তারা সম্পূরক শুল্কের বেইসলাইন বা ভিত্তি দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে। এ বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা কর্মকর্তা সুমাইয়া জাবিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের খুচরা মূল্যের (এমআরপি) ৩০ শতাংশ হারে যে দাম আসে তার ওর কটন পণ্য হলে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং নন-টন পণ্যের জন্য ১২ দশমিক ৩৬ শতাংশ হারে কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি বা সিভিডি পরিশোধ করতে হয়। নতুন প্রস্তাবে দেশটি শুল্কহার আগেরটি বহাল রাখলেও এর ভিত্তিমূল্য বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে। অর্থাৎ ভারতের বাজেটে নেওয়া নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৬০ শতাংশ ভিত্তিমূল্যের ওপর শুল্ক দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীরা ট্যারিফ কমিশনে উদ্বেগ জানিয়েছেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। জানা গেছে, সিভিডি বাড়ানোর নতুন এ সিদ্ধান্তে ঢাকার আপত্তির বিষয়টি এরই মধ্যে দিল্লিকে জানানো হয়েছে। গতকাল দুই দেশের জয়েন্ট ট্রেড কমিশনের বৈঠক ছিল দিল্লিতে। সেখানে এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়েছে, নতুন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তা শুধু বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করবে তাই নয়, দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যেসব উদ্যোগ বা কর্মসূচি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে দুই দেশের সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের, তাও বাধাগ্রস্ত করবে।

 সূত্র জানায়, দুই দিনব্যাপী জয়েন্ট ট্রেড কমিশনের এ বৈঠকটি দিল্লিতে শুরু হয় বুধবার, যা গতকাল শেষ হয়েছে। ওই বৈঠকে অতিরিক্ত সিভিডি আরোপের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে তা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল শক্ত অবস্থান তুলে ধরেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুনীর চৌধুরী এ প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায় বলেন, ‘আমরা ভারতের সিভিডি বাড়ানোর বিষয়টি শুনেছি। দ্বিপক্ষীয় জেটিসির বৈঠকে এ বিষয়ে আমাদের আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দল দেশে ফিরলে এ বিষয়ে ভারতের বক্তব্য জানা যাবে। তারপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর