শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঐতিহ্যের ইফতার চট্টগ্রামে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ঐতিহ্যের ইফতার চট্টগ্রামে

পড়ন্ত বিকাল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। দুপুর থেকেই দেখা মিলছে না সূর্যের। বইছে শীতল-সতেজ হাওয়া। মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি খেলা ছিল দিনভর। প্রকৃতিও যেন রোজাদারদের সহায়ক। কিন্তু বিকাল গড়াতেই প্রাত্যহিক কর্ম ছেড়ে রোজাদাররা ছুটছেন অভিন্ন পানে। সবাই ব্যস্ত ইফতার ক্রয়ে। চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচতারকা হোটেল ও আধুনিক রেস্তোরাঁয় ভিড় করছেন রসালো বাহারি ইফতার ক্রয়ে। গতকাল রমজানের দ্বিতীয় দিনে বিকালের চিত্র ছিল এমনই। রমজানের প্রথম দিকেও  ইফতার ক্রয়ে এর ব্যত্যয় ঘটেনি। রমজানের তৃতীয় দিনেও চট্টগ্রামের হোটেলগুলোতে মুগ্ধতার সব আবেশ নিয়ে সাজানো ছিল ইফতারের পসরা। প্রতিটি দোকানে শোভা পাচ্ছিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্যময় সব খাবার। সঙ্গে ছিল আধুনিক রসনাও। দোকানিরা সমন্বয় ঘটিয়েছেন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার। রসনা-তৃপ্তির বৈচিত্র্যময় সব পদ দিয়ে সাজানো হয়েছে ইফতারির সব পণ্য। পাঁচতারকা হোটেল থেকে মধ্য ও নিম্ন মধ্য মানের সব হোটেলে ইফতারি পণ্যের বিপুল সমাহার। এসব দোকানে আছে নতুন আইটেমের প্যাকেজ, রয়েছে বিশেষ ছাড়ও। প্রতিটি দোকানে ছিল উপচে পড়া ভিড়।   

বাহারি ঐতিহ্য আয়োজনের মধ্যে ছিল মেজবানি মাংস, তন্দুরি চিকেন, কাবাব, অ্যারাবিক স্পেশাল ক্লুজিং, নানা পদের হালিম, ফিরনি, চিকেন রোল, জিলাপিসহ নানা স্বাদের ইফতারি। আধুনিক ইফতারের মধ্যে আছে স্পেশাল দুধ-চা, লাচ্ছা পরটা, সুইট লাচ্ছি, জাফরানি মিল্ক জিলাপি, সুইট লাচ্ছি, কুলফি আইসক্রিম, মাটন সমুচা, জালি কাবাব, কিশমিশ ফিরনি, প্রিমিয়াম হালিম আর ম্যাংগো জুস। আছে বিদেশি উপাদানে দেশীয় আইটেম। তুরস্কের সানফ্লাওয়ার অয়েল, দুবাইয়ের নিডো গুঁড়াদুধ, স্পেনের বিখ্যাত জাফরান, কাশ্মীরের লম্বা কিশমিশ, অস্ট্রেলিয়ার সুপার রিফাইন্ড চিনি, সিঙ্গাপুরের ময়দা, ইন্ডিয়ান ভেজিটেবল ডালডা, হলুদ-মরিচ-গরম মসলা, দেশি পিয়াজ-রসুন, টাঙ্গাইলের ঘিসহ দেশ-বিদেশের সেরা ব্র্যান্ডের দামি উপাদানে তৈরি হয়েছে ইফতার। নগরীর পাঁচতারকা হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ, তিন তারকা মানের হোটেল দি পেনিনসুলা, হোটেল আগ্রাবাদে আছে বিশেষ আকর্ষণীয় ইফতারি। তা ছাড়া মনভোলানো আয়োজন নিয়ে আছে ওয়েল পার্ক, অ্যামব্রোশিয়া, রেড চিলি, ওহ চিটাগাং, সিলভার স্পুন, বোনানজা, তাবা, হ্যান্ডি, ক্যান্ডি, মেরিডিয়ানসহ অভিজাত-হোটেল রেস্তোরাঁ। চট্টগ্রামের একমাত্র পাঁচতারকা হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুর ইফতার আয়োজনে আছে ছোলা-মুড়ি থেকে শুরু করে বিদেশি নানা খাবার। আছে দেশি-বিদেশি নানা স্বাদের মিষ্টি এবং ফল। ইফতারের টেবিলে বড় আকর্ষণ হিসেবে আছে হালিম। আছে ১ থেকে ১৫ রমজান পর্যন্ত ১০ ভাগ কম খরচে ইফতার পার্টি করার সুযোগ। ইফতার পার্টিতে সাড়ে ৩০০ এর বেশি হলে থাকছে এক্সক্লুসিভ ডিসকাউন্ট। হোটেল পেনিনসুলায় রাখা হয়েছে চিকেন চাম্বুসি, সাসলিক, মাশরুম পাপ, ললিপপ, চকলেট চিকেন ললিপপ, কোরাল মাছের মালপানসহ নতুন নতুন আরও নানা খাবার। হোটেল আগ্রাবাদে রয়েছে ইফতারের বর্ণিল আয়োজন। টেকওয়েতে থাকছে ৫২ পদের ইফতার। চমৎকার স্বাদের আকর্ষণীয় সব ইফতার আইটেম দিয়ে সাজানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ইফতার বক্স। একজন রোজাদারকে দিতে হবে মানভেদে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। ইফতার বক্সের সঙ্গে আছে বিভিন্ন ফলের জুস। আছে ইফতার পার্টির ব্যবস্থা, ব্যুফে ইফতার ও ডিনারের ব্যবস্থা। স্পেশাল আইটেমে রয়েছে চিকেন বোন, বিফ হালিম, চিকেন আকনি, মাটন হালিম।  ওয়েল ফুডে আছে চারটি সেট মেন্যু। এগুলোর দাম ৬৫০ থেকে এক হাজার টাকা। আছে চার ধরনের টেকওয়ে বক্স। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। তা ছাড়া আছে অ্যারাবিয়ান স্পেশাল ক্লুজিং নামের প্যাকেজ। এই প্যাকেজের মূল্য ১০ জনের প্যাকেজ ১৪ হাজার টাকা, ১৫ জনের প্যাকেজ ২০ হাজার ও ২০ জনের প্যাকেজ ২৫ হাজার টাকা। জিইসি মোড়ের বোনানজা রেস্টুরেন্টে ইফতার আইটেমে থাকছে প্রায় ৩০ প্রকারের। বোনানজার নতুন আকর্ষণ মোরগ মুসল্লাম। প্রতিটির দাম ৬০০ টাকা। বিফ মেজবানি প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, রেশমি জিলাপি প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা, মাটন হালিম ৪৫০ টাকা, চিকেন হালিম ৪২৫ টাকা। সেট ইফতার মেন্যুতে আছে ৩৭৫, ৪৫০, ৪৭৫ ও ৫২৫ টাকা। ইফতার উইথ ডিনারে থাকছে জনপ্রতি ৭০০ ও ৭৫০ টাকার দুটি সেট।  হান্ডি ইন্ডিয়ান ব্রিস্টোতে আছে গরু-মুরগি-খাসির মাংসের হালিম। ?বড় এক পাতিলের দাম ৪৫০ টাকা। চিকেন ও মাটন হালিমের দামও একই। এর বাইরে ৫০ টাকায় বাটার নান, ৬০ টাকায় আলু পরটা, ৭০ টাকায় চিকেন মোগলাই পরটা থেকে শুরু করে সব মজাদার আইটেম থাকছে। এখানকার সবচেয়ে দামি পদটি হচ্ছে ৯৫০ টাকার মূল্যের মাটন রান-ই-সেকান্দারি। আগ্রাবাদের অভিজাত রেস্টুরেন্ট অ্যামব্রোশিয়ায় সাত দিনের জন্য সাতটি মেন্যু থাকবে ডেইলি ইফতার পি-প্লেট কাম ব্যুফে ডিনারে। ইফতার ও ডিনারে আছে আকর্ষণীয় ২০ থেকে ২৫টি পদ।

সর্বশেষ খবর