শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

খুলনার ঐতিহ্য নানা হালিম ও মলিদা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার ঐতিহ্য নানা হালিম ও মলিদা

ইফতার মানেই পিয়াজু, বেগুনিসহ থালাভর্তি ভাজাপোড়া খাওয়া। সঙ্গে এক বাটি হালিম হলে তো কথাই নেই। আর সেই হালিম যদি হয় খুলনার বিখ্যাত নানা হালিম তাহলে পূর্ণতা আসে ইফতারে। এবারও ইফতার বাজারে হালিমের কদর সবার উপরে।

রমজানের প্রথম দিন থেকেই জমে উঠেছে খুলনার ইফতার বাজার। দুপুর গড়াতেই সরগরম হয়ে ওঠে হালিম বিক্রির দোকানগুলো। মহানগরীর পাইওনিয়র মহিলা কলেজের সামনে ঐতিহ্যবাহী ‘নানা হালিম’ বিক্রি হচ্ছে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে। নানা হালিম বিক্রেতা প্রায় ৮০ বছর বয়সী হজরত আলী বললেন, প্রতিদিন ৬০ কেজি খাসির মাংস ও ৬০ কেজি সোনা মুগ ডালের হালিম তৈরি করি। ভেজালমুক্ত আসল হালিমের স্বাদই ব্যবসার মূল কথা। বললেন, ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি রমজানে এই হালিম বিক্রি করে আসছি।

গতকাল সকালে সরেজমিন দেখা যায়, ৫-৬ জন কর্মচারী সঙ্গে নিয়ে হজরত আলী হালিম রান্না করছেন। হালিমের মান ঠিক রাখতে এখনো তিনি নিজ হাতেই রান্না করেন। মিষ্টভাষী এই মানুষটিকে সবাই নানা বলে ডাকেন আর সেই থেকেই নানা হালিম। হজরত আলী বললেন, আমার তৈরি হালিমে কোনো ভেজাল নেই। দেশি পিয়াজ, তেল, ঘি, ধনে পাতা আর বিশেষ মসলা মেশানো হয় হালিমে। প্রতিদিন সকালে ৫০ হাজার টাকার হালিম রান্না করেন। যা মাগরিবের আগেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এটি তার কাছে এখন নেশার মতো হয়ে গেছে বললেন হজরত আলী। খুলনার ইফতারিতে আরেক ঐতিহ্য ‘মলিদা’। চালের গুঁড়া, নারকেল, গুড় মিশিয়ে শরবতের মতো তৈরি মলিদা ঘরোয়া পরিবেশেই বানানো হয়। এর সঙ্গে মেশানো আদার বাড়তি স্বাদ রোজাদারদের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে। খুলনার ঐতিহ্য হচ্ছে নানা হালিম ও মলিদা। খুলনার স্যার ইকবাল রোডে আপ্যায়ন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অতিথি হোটেলেও বিক্রি হয় শাহী হালিম। আপ্যায়ন হোটেলের বিক্রেতা তপন কুমার দাস জানান, শুরুতে ‘শাহী’ নামের নন বাঙালি এক বাবুর্চি সুস্বাদু এই খাবার তৈরি করে বিক্রি করেন। পরবর্তীকালে তার নাম অনুসারে এটি শাহী হালিম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এবারের রমজানে পাড়া-মহল্লার ফুটপাথ থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁ নানা পদের ইফতারের পসরা নিয়ে বসেছে। বিভিন্ন রঙের শামিয়ানা, বাঁশ আর টেবিল বসিয়ে পুরো ফুটপাথ দখলে নিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে চলছে দোকানিদের হাঁকডাক।  যেন ইফতারের বাজার নয় উৎসব।

নগরীর নিউ মার্কেট এলাকা, শেখপাড়া বাজার, সাতরাস্তার মোড়, ফেরিঘাট, খান-এ সবুর রোডের মান্নান চটপটির গলিতে হরেক রকমের সামগ্রী নিয়ে বসেছে ইফতার মেলা। এখানে পাওয়া যাচ্ছে—  ছোলা, মুড়ি, শাহী জিলাপি, ডিমের চপ, চিকেন অনিয়ন, চিকেন ফ্রাই, ফিন্নি, মৌসুমি ফল, পাটিসাপটা পিঠা, রকমারি হালিম, চিকেন তন্দুরি, সুতি কাবাব, পুডিং ইত্যাদি। বেলা ৩টার দিকে সাতরাস্তার মোড়ে দেখা যায়, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও মুখরোচক ইফতারি সাজিয়ে বসেছে। বিকালের মধ্যেই তাদের বেচাকেনা জমজমাট হয়ে উঠবে বলে জানান বিক্রেতারা। ক্রেতারা জানালেন, রমজানে একসঙ্গে এত বৈচিত্র্যময় খাবার আর কোথাও মেলে না। হোটেল রয়্যাল ও ক্যাসল সালামর রেস্টুরেন্টের নিরিবিলি পরিবেশে ইফতার সেট মেন্যু দিয়ে ইফতার করার সুব্যবস্থা করেছে। এখানে বিভিন্ন ইফতারি সামগ্রী কেনার সুবিধা রয়েছে। হোটেল রয়্যালে ১৪টি খাবার আইটেম দিয়ে ইফতার সেট মেন্যু সাজানো হয়েছে। হোটেল ক্যাসল সালামে বাহারি নামের ও স্বাদের খাবার দিয়ে সাজানো ইফতার রেডি প্লেট পাওয়া যাচ্ছে। মজাদার মিষ্টান্ন, শাহী জিলাপি ও কাবাবের সমন্বয়ে ইফতারিতে নগরীর ফেরিঘাটের দোকানগুলোতেও রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মির্জা মোরশেদুল হক জানান, এখানকার দোকানগুলোতে পুরনো ঐতিহ্যের একটা মিশেল রয়েছে। ইফতারি ও মাগরিবের নামাজের পর এখানে দোকানগুলোতে নানা বয়সীদের আড্ডা যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সর্বশেষ খবর