রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বৃষ্টিতে ঢাকার রাস্তায় হাঁটুপানি

খোঁড়াখুঁড়ি ও খানাখন্দে দুর্বিষহ জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃষ্টিতে ঢাকার রাস্তায় হাঁটুপানি

সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকার রাস্তা ও অলিগলিতে পানি জমে যাওয়াকেই নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে নগরবাসী। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে নানান প্রতিশ্রুতি দেওয়া দুই মেয়র বছর পার করলেও ন্যূনতম কমেনি ঢাকাবাসীর ভোগান্তি। বরং উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বহীন খোঁড়াখুঁড়িতে বেড়েছে দুর্ভোগ। গতকালও সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কে কয়েক ঘণ্টার জন্য জমে যায় পানি। কিছু এলাকার অলি-গলিতে সকালের এক ঘণ্টা বৃষ্টিতে জমা হাঁটুপানি রাতেও সরেনি। বৃষ্টিতে গরম কমে যাওয়ার স্বস্তি ভুলিয়ে দিয়েছে রাস্তার কাদা পানি।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার বেগে রাজধানী ঢাকায় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ২ মিনিট স্থায়ী এই ঝড়ের সময় বৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টির  পর ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে রাস্তায় অচল হয়ে থাকতে দেখা যায় সিএনজি অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার। সেই সঙ্গে আছে রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে গুলশান-১ এ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ডিসিসি মার্কেটের ভিতরে প্রায় হাঁটুপানি জমে আছে। উপায় না থাকায় পার্কিং এলাকায় এই পানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে প্রায় শখানেক গাড়ি। ঠিক একই চিত্র গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেটেও। দোতলায় দাঁড়িয়ে পুরো এলাকাটিকে বড় পুকুর বলেই মনে হচ্ছিল। একই চিত্র নিউমার্কেটের সামনের মহাসড়কে। দুপুরে হাঁটুপানিতে ঢেউ তুলে চলছে বাস। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে ভাঙা ও খানাখন্দে ভরা রাস্তায় পানি জমে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতার মরণফাঁদ। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শুরু করে নতুন বাজার, শাহজাদপুর থেকে বাড্ডা পর্যন্ত প্রগতি সরনি সড়কে যানজট আর জলজটে একাকার। খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি ড্রেনেজের রাস্তায় ফেলে রাখা ময়লাগুলো পানিতে ডুবে তৈরি করেছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। অবশ্য বেশ কয়েকদিন ধরেই নতুন বাজার থেকে শাহজাদপুর সুবাস্তু নজরভেলী টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। পাঁচ মিনিটের রাস্তায় যেতে এক ঘণ্টাও লেগে যায়। গতকালও দিনভর যানজট ছিল। রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি ড্রেনেজ পরিষ্কার করে ময়লাগুলো রাস্তার পাশে রাখায় বৃষ্টিতে তা পুরো সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনদুর্ভোগ আরও বেড়েছে। শাহজাদপুরের বাসিন্দা মা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী মাইনুদ্দিন ফয়সাল জানান, বর্ষার আগেই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। কিন্তু এর শেষ কবে কেউ জানে না। নতুন বাজার থেকে বাড্ডা পর্যন্ত মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে কুড়িল থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক হয়ে নর্দ্দা পর্যন্ত ড্রেনেজের ময়লাগুলো রাস্তায় ফেলে রাখায় জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এর মধ্যে গতকালের বৃষ্টিতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকা অল্প বৃষ্টিতেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতেই এ এলাকার অনেক রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যায়। এলাকার বাসিন্দাদের এ সময় দুর্ভোগের সীমা থাকে না। রাজধানীর আদাবর থানার শেখেরটেক এলাকার ১২ নম্বর সড়কে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। জলাবদ্ধতায় সড়কের মাঝে সৃষ্ট গর্তের কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। যারা জানেন না, সেসব লোকজন যানবাহন নিয়ে ওই রাস্তায় গিয়ে গর্তে পড়ছেন। যানবাহন তো নষ্ট হচ্ছেই— পাশাপাশি কারও হাত ভাঙছে। কারও বা পা ভাঙছে। বিশেষ করে শ্যামলী থেকে যাওয়া রিং রোড থেকে শেখেরটেক ১২ নম্বর সড়কের দুটি লিংক রোডেরই একই অবস্থা। রিকশা নিয়ে গেলে রিকশাসহ গর্তে পড়ে আটকে যায় পথচারীরা। দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তা দুটির এই খারাপ অবস্থা। কিন্তু টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।  যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকের সামনে থেকে কাজলা পেট্রলপাম্প পর্যন্ত ঢাকা থেকে বেরোনোর এ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সে পথেই চলাচল করছে চট্টগ্রাম সিলেটসহ ১২ জেলার আন্তঃনগর বাস সার্ভিসসমূহ। এতে প্রতিদিনই কম-বেশি দুর্ঘটনায় পড়ছে বাস-ট্রাক-মাইক্রো-কার। প্রায় একই অবস্থা ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে কুতুবখালী থেকে যাত্রাবাড়ী থানা পর্যন্ত রাজধানীতে প্রবেশ পথের।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কে দুই পাশে বৃষ্টি পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের টঙ্গী বাজার, চেরাগআলী, কলেজগেট, স্টেশনরোড, বোর্ডবাজার, বড়বাড়ি, গাজীপুরা, বাসন, হারিকেন, ভোগড়া চৌরাস্তা, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের সংযোগ সড়কগুলোতে অবস্থা আরও ভয়াবহ। গতকাল দুপুরে বৃষ্টির পর বড়বাড়ি, গাজীপুরা, কলেজগেট এলাকায় দেখা যায়, কাঁচাবাজারের দোকানিরা তাদের মালামাল হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে থেকে বিক্রি করছে। এ সময় এক নারী ক্রেতা রিকশা দিয়ে বাজার সওদা করতে আসেন। কিন্তু বড়বাড়ি কাঁচা বাজারের পাশে একটি গর্তে রিকশার চাকা পড়ে গিয়ে ওই ক্রেতা পানিতে হাবুডুবু অবস্থায় পড়েন।

সর্বশেষ খবর