রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
রাজনীতি

জাপায় পদ-পদবির জন্য তদবির

ঈদের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাপায় পদ-পদবির জন্য তদবির

জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসহ সাংগঠনিক সম্পাদকীয় পদগুলোয় নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতারা। বৃহস্পতিবার দলটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৩৭ সদস্যের প্রেসিডিয়ামের তালিকা প্রকাশ করলেও কেউ কেউ এখনো প্রেসিডিয়াম পদ পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য রাতদিন পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস, এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক, জাপা মহাসচিবের বাসভবন, বনানী কার্যালয়, রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবন ও জিএম কাদেরের উত্তরার বাসভবনে নেতারা প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন। এ ছাড়াও এদের বাইরে কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে নেতা-কর্মীরা যোগাযোগ করছেন তাদের পছন্দের পদ পাওয়ার জন্য। তবে এবার যোগ্য কর্মীদেরই কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখতে চান এরশাদ। জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সফলভাবে কাউন্সিল করতে পেরেছি। ইতিমধ্যে পার্টির চেয়ারম্যান ৩৭ সদস্যের প্রেসিডিয়ামের তালিকা প্রকাশ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘প্রেসিডিয়াম গঠনের এখতিয়ার শুধু স্যার এরশাদের।’ অন্য পদগুলোয় আসার জন্য নেতা-কর্মীদের তদবির প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি বড় দল। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে দলটি নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বড় দলে পদ পাওয়ার জন্য চেষ্টা থাকবেই। তবে এবার সৎ, যোগ্য ও পরীক্ষিতরাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাবেন।’ জানা যায়, ১৪ মে দলটির অষ্টম কাউন্সিলে চেয়ারম্যান, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদের শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি। তবে পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, আগামী ঈদের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কমিটিতে দলের দুঃসময়ে সক্রিয় থাকা নেতারা ঠাঁই পাবেন।

তহবিল শক্তিশালী করতে উদ্যোগ : সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি গঠনের আগেই পার্টির দলীয় তহবিল শক্ত করতে চান এইচ এম এরশাদ। আগের সব বকেয়া পরিশোধসাপেক্ষে নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এমন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতারা বিশেষ করে দীর্ঘদিন যারা দলীয় তহবিলে নিয়মিত চাঁদা দেননি তারা একটু বিপাকেই পড়েছেন। ৩৭ প্রেসিডিয়ামের সব সদস্য চাঁদা পরিশোধ করেছেন। ৪১ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৩৪ উপদেষ্টা, ১৬ যুগ্ম মহাসচিব, ৩৬ সাংগঠনিক সম্পাদক, ২৩ বিভাগীয় সম্পাদক, ২৩ যুগ্ম সম্পাদক এবং ৯৯ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে জাপার এই কেন্দ্রীয় কমিটি। মোট সদস্য হবে ২৯৯। সবাইকে অতীতের সব মাসিক চাঁদা পরিশোধ করতে হবে। প্রেসিডিয়াম এবং সংসদ সদস্য ৩ হাজার, উপদেষ্টা ২ হাজার ৫০০, ভাইস চেয়ারম্যান ২ হাজার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ১ হাজার এবং সদস্যদের ৫০০ টাকা হারে দলীয় ফান্ডে জমা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। জানা গেছে, এমন অনেক নেতা আছেন ২০১০ সালের জাপার সম্মেলনের পর এখনো কোনো টাকাই পরিশোধ করেননি। সে হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্যের কাছে ৫০ হাজারের বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে।

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। পার্টির প্রধান সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের একার পক্ষে এত বড় সংগঠন চালানো অসম্ভব।

জাপার ৩৭ প্রেসিডিয়ামে আছেন যারা : এইচ এম এরশাদ বৃহস্পতিবার ৩৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের নাম ঘোষণা করেছেন। তারা হলেন— আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এম এ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, আবুল কাশেম, দেলোয়ার হোসেন খান, সৈয়দ আবু হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম হাবিব, গোলাম কিবরিয়া, সাহিদুর রহমান, শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, ফকরুল ইমাম, মুজিবুল হক, নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, সালমা ইসলাম, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, এ কে এম মাঈদুল ইসলাম, মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), হাবিবুর রহমান, সুনীল শুভরায়, এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সাইফুদ্দিন আহমেদ, আজম খান, এ টি ইউ তাজ রহমান, মহসিন রশীদ, মশিউর রহমান, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সোলায়মান আলম শেঠ, আতিকুর রহমান ও নাসরিন জাহান।

জাপার ৯ উপদেষ্টা ও ১৮ ভাইস চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পার্টির নতুন কমিটিতে ৯ জন উপদেষ্টা ও ১৮ জন ভাইস চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করেছেন। জাতীয় পার্টির ৮ম জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পাটির্র চেয়ারম্যান দ্বিতীয় পর্যায়ে সম্প্রতি এ নাম ঘোষণা করেন।  ৯ জন উপদেষ্টার মধ্যে আছেন- এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান(সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা), আ. ন. ম শাহজাহান (শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা), রিন্টু আনোয়ার (প্রচার বিষয়ক উপদেষ্টা), সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা), মেরিনা রহমান (সমবায় বিষয়ক উপদেষ্টা), সৈয়দ দিদার বখৎ (তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা), ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী (বিচার বিভাগ বিষয়ক উপদেষ্টা), ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার ( মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা) এবং সোমনাথ দে (সংখ্যালঘু বিষয়ক উপদেষ্টা)।

 

 ১৮ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে আছেন- মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম, নাসির মাহমুদ, মোঃ নুরুল আমিন শানু, ড. আনোয়ার চৌধুরী জীবন, এম এ তালহা, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এমপি, মাহজাবীন মোরশেদ এমপি, মোঃ নুরুল ইসলাম মিলন এমপি, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, মিসেস শেরীফা কাদের, খন্দকার আব্দুস সালাম, সালাউদ্দিন আহমেদ, কোরবান আলী, এ্যাডঃ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন কাদেরী, অ্যাডভোকেট একরামুর হক, শামসুল আলম মাস্টার এবং এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী। ভাইস চেয়ারম্যা হবে মোট ৪১ এবং উপদেষ্টা হবে ১৭ থেকে ২০জন। পার্টির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টা এবং ভাইস চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পদে আসার জন্য জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর