রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে অসন্তোষ ব্যবসায়ীদের

শনিবার কাস্টম হাউস খোলা রাখার উদ্যোগ

রুহুল আমিন রাসেল

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দিন দিন অসন্তোষ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। দ্রুত পণ্য খালাস করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। ভারসাম্যহীনতার কারণে বন্দরের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি ছুটির দিন প্রতি শনিবার কাস্টম হাউস খোলা রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আগামী ১৫ জুন আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে রমজানে দ্রুত পণ্য খালাস ও চট্টগ্রাম বন্দরের যানজট নিরসনে ছুটির দিনে শুল্কায়নসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালু রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল এক পত্র প্রেরণ করেন। সম্প্রতি ওই পত্রে এম খালেদ ইকবাল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। ফলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারিতে চাপ অব্যাহত গতিতে বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকলেও বিশেষ কিছু কার্যক্রম ছাড়া সব কাজ বন্ধ থাকে কাস্টমস হাউসের। এতে সপ্তাহে মাত্র পাঁচ দিন কার্যক্রম চালু থাকায় কাজের চাপ বাড়ে। অন্য দুই দিন বন্দরের কাজ তুলনামূলক কমে যায়। এতে কাজের ভারসাম্যের অভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটে। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির শিকার হন। তারা এ নিয়ে প্রায়ই অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯ মে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও বন্দরের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এনবিআরের অনুমতি সাপেক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আগামী দুই মাস প্রতি শনিবার কাস্টমস হাউস খোলা রাখা হবে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বন্দরে পণ্য খালাসের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে কনটেইনারের চাপ। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই প্রতি শনিবার খোলা রাখার কোনো বিকল্প নেই। কাস্টমস খোলা রাখার পাশাপাশি এখানকার সংশ্লিষ্ট সবগুলো ব্যাংকের শাখাও খোলা রাখতে হবে বলে তিনি জানান। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, এক মাস ধরে নানা কারণে বন্দরের জেটি আর বহির্নোঙরে পণ্য ওঠানামা ব্যাহত হওয়ায় এমনিতেই সমস্যা অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমান বন্দরের ভেতরে-বাইরে জাহাজ রয়েছে দেড় শতাধিক। শিপিং এজেন্টরা বলছেন, এ জট স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। বাজেট আর রমজানের সময়টাতে এমনিতেই বাড়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি। তাই পণ্যবাহী জাহাজের ভিড় এখন চট্টগ্রাম বন্দরে। এর আগে মাসখানেক ধরে লাইটার শ্রমিক-মালিকদের ধর্মঘটসহ নানা কারণে ব্যাহত হয়ে আসছিল বন্দরের পণ্য ওঠানামা। এর সঙ্গে যোগ হয় বন্দরের যন্ত্রপাতি সংকট। ফলে সঠিক সময়ে পণ্য খালাস করতে না পেরে যেমন বাড়ছে পণ্যের আমদানি খরচ, তেমনি জট সৃষ্টি হচ্ছে কনটেইনার ডিপোগুলোতে। তবে দ্রুত এ জট না খুলতে পারলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বন্দরের সক্ষমতা প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাড়ায় বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি। এরই বহিঃপ্রকাশ চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জট। তাই সরকারের উচিত জট খুলতে প্রয়োজনে সপ্তাহে সাত দিনই বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার স্বার্থে কাস্টমস খোলা রাখা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ও বহির্নোঙরে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আটকে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সক্ষমতা পরিমাপের বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত ধারণক্ষমতার ৭০ শতাংশের বেশি কনটেইনার পড়ে থাকলে বন্দরের পরিচালন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু কনটেইনার যে হারে বেড়েছে, সে অনুযায়ী অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। যন্ত্রপাতিরও সংকট রয়েছে। ফলে সক্ষমতার দিক থেকে বন্দর পিছিয়ে পড়ছে।

 

সর্বশেষ খবর