সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
সংসদে তারানা হালিম

ফেসবুক ওয়েবসাইটে গোয়েন্দা নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ফেক (ভুয়া) আইডিসহ দেশের বাইরে অবস্থানরত অ্যাডমিনের মাধ্যমে পরিচালিত ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট, ব্লগ ইত্যাদির ওপর বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গোয়েন্দা নজরদারি করছে। সরকারের সঙ্গে গুগলের এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি। তবে আলোচনার মাধ্যমে ফেসবুক, গুগল ও মাইক্রোসফটের সঙ্গে বিশদ সমঝোতা হয়েছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে  তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকালের প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি ও ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর টেবিলে উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সংসদকে এ তথ্য জানান। দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির পর গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫৮টি অনুরোধের মধ্যে ২১টিতে সাড়া দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রথম ফেসবুক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে যে তারা ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ তথ্য এবং চারটি কনটেন্ট ব্লক করেছে। গুগলের ইউটিউবেও নীতিমালা পরিপন্থী ভিডিও সরকারের অনুরোধে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শিশু পর্নোগ্রাফি রোধে এবং সাইবার নিরাপত্তায় মাইক্রোসফটের সঙ্গেও সরকার কাজ করছে। তিনি জানান, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মিথ্যা, মানহানিকর, অপবাদমূলক, হয়রানিমূলক, বিদ্বেষপূর্ণ, জঙ্গিবাদী, ঘৃণামিশ্রিত, শিশুদের অপব্যবহার, অশ্লীল, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর বক্তব্য বা বিষয়বস্তু প্রচার রোধে এবং এসব ক্ষতিকর ওয়েবসাইটে জনগণের প্রবেশ ঠেকানোসহ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

গুগলের সঙ্গে চুক্তি হয়নি : স্বতন্ত্র সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে গুগলের এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের চুক্তি হয়নি। ফেসবুক, গুগল ও মাইক্রোসফটের সঙ্গে বিশদ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে। ফলে যুক্তিগ্রাহ্য অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা প্রতিকার বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি নিশ্চিত করার জন্য অধিকতর শক্তিশালী করার উদ্দেশে ইন্টার সেফটি সলিউশন সিস্টেম ক্রয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে এনটিএমসি এবং আইআইজির মাধ্যমে রাষ্ট্র-সমাজবিরোধী ও ধর্মবিরোধী কনটেন্ট বন্ধ করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ফেসবুক, গুগল ও মাইক্রোসফটের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সদর দফতরগুলোর সহায়তায় বিটিআরসি এবং এলইএ (ল এনফোরসমেন্ট এজেন্সি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

বায়োমেট্রিক ডিভাইসের সেভ অপশন রাখা হয়নি : ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, বায়োমেট্রিক ডিভাইসের যে অ্যাপের মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ করা হয়েছে তাতে কোনো সেভ অপশন রাখা হয়নি। এ পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপ সংগৃহীত হচ্ছে না। এমনকি নতুন কোনো তথ্যও সংগৃহীত হচ্ছে না। কেবল জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারে রক্ষিত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি একটি রিয়েল টাইম অন লাইন ভেরিফিকেশন। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকাল টেবিলে উত্থাপিত মোহাম্মদ ইলিয়াছের (কক্সবাজার-১) প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের আগ পর্যন্ত সঠিকভাবে গ্রাহকের পরিচিতি নিশ্চিত করার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না। পরীক্ষামূলকভাবে নমুনা যাচাই করে দেখা যায়, দেশের অধিকাংশ গ্রাহকের পরিচিতি সঠিক নয়। তবে বর্তমান বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে গ্রাহকের পরিচিতি নিশ্চিতকরণ সম্ভব হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে সহায়তা করবে। তারানা হালিম বলেন, বায়োমেট্রিক ডিভাইসে যে অ্যাপের মাধ্যমে ছাপ গ্রহণ করা হয়, তাতে কোনো সেভ অপশন রাখা হয়নি। আঙ্গুলের ছাপ অ্যানক্রিপডেট বাইনারি কোড হিসেবে সরাসরি এনআইডি ডাটাবেসের সঙ্গে রিয়েল টাইম ভিত্তিতে যাচাই করা হয়। এটি সংরক্ষণের প্রয়োজন হয় না এবং সুযোগও নেই।

সর্বশেষ খবর